সাধারণ আলোচনা





 
জানুয়ারি থেকে নিজ এলাকায় জাতীয় পরিচয়পত্রের ভুল সংশোধন করা যাবে
alt
ঢাকা ডেস্ক :: আগামী জানুয়ারি থেকে উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় হতে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ এবং এর ভুলত্রুটি সংশোধন করা যাবে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভোটারদের ভোগান্তি লাঘব করতে
জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত ১০টি কাজের দায়িত্ব মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বলে ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানে সহায়তা প্রদান প্রকল্পের উপ-পরিচালক আনিস মাহমুদ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের কাজ বিকেন্দ্রীকরণ করা হচ্ছে। জানুয়ারি থেকে পরিচয়পত্র সম্পর্কিত সমস্যার সমাধান নিজ নিজ এলাকার করা যাবে। মূল সার্ভার স্টেশন না হওয়া পর্যন্ত এ সুযোগ বহাল থাকবে। সার্ভার হয়ে গেলে এসব কাজ আরও সহজ হয়ে যাবে।
সঠিকভাবে এসব কাজ সমাধা করতে কমিশন সারাদেশের কর্মকর্তাদের চলতি মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রশিণ দেবে বলে তিনি জানান।
কমিশনের সংশ্লিষ্ট কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সচিব মিহির সারোয়ার মোর্শেদ বলেন, মাঠ কর্মকর্তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম পরিবর্তন, নামের বানান সংশোধন, স্বামী বা স্ত্রীর নাম পরিবর্তন, জন্ম তারিখ সংশোধন, ঠিকানা সংশোধন, ছবি পরিবর্তন, স্বাক্ষর পরিবর্তন, রক্তের গ্রুপ পরিবর্তন, ডুপ্লিকেট পরিচয়পত্র ইস্যু এবং অবিতরণকৃত পরিচয়পত্র ভোটারদের মধ্যে প্রদানের ১০টি দায়িত্ব দেয়া হবে।
জাতীয় পরিচয়পত্রের নামের বানান সংশোধনে ভোটারদের নিজ এলাকার উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কাছে যেতে হবে। এক্ষেত্রে এসএসসি বা দাখিল পরীক্ষার সনদ, জন্ম সনদ, পাসপোর্ট বা যে কোন একটি প্রমাণযোগ্য দলিল প্রয়োজন হবে। এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার সনদ বা চাকরিতে যোগদান সংক্রান্ত কোন কাগজ দেখিয়ে পরিচয়পত্রে দেয়া জন্ম তারিখও সংশোধন করা যাবে। তবে যথাযথ সনাক্তকরণ দলিল না থাকলে জন্মতারিখ সংশোধন করা যাবে না বলে আনিস মাহমুদ জানান।
পরিচয়পত্রে দেয়া ঠিকানা সংশোধনের ক্ষেত্রে বাড়ির দলিল বা ভাড়ার রসিদ বা বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, টেলিফোন বিলের যে কোন একটি কাগজ প্রয়োজন হবে। উপজেলা নির্বাচন অফিসারকে এসব কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম পরিবর্তনের জন্য জেলা নির্বাচন অফিসে যেতে হবে। তবে বিবাহ বিচ্ছেদ বা অন্য কোন কারণে স্বামী বা স্ত্রীর নাম পরিবর্তন উপজেলা নির্বাচন অফিসে করা যাবে। নাম পরিবর্তনের জন্য এফিডেভিট, বিয়ের দলিল, শিক্ষাগত যোগ্যতার (যদি থাকে) সনদ বা রেজিস্ট্রেশন কার্ডের যে কোন একটি প্রমাণ সঙ্গে রাখতে হবে।
জাতীয় পরিচয়পত্রের বিকৃত ও অস্পষ্ট ছবি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ভোটারকেই ছবি সরবরাহ করতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই তিন মাসের মধ্যে তোলা রঙিন ছবি লাগবে। চলতি ডিসেম্বর থেকে দেশের প্রতিটি উপজেলা নির্বাচন অফিসারকে এ দায়িত্ব দেয়া হবে।
এছাড়া ভোটারের স্বাক্ষর পরিবর্তন, রক্তের গ্রুপ পরিবর্তন, হারিয়ে যাওয়া পরিচয়পত্রের বদলে নতুন পরিচয়পত্র প্রদান, অবিতরণকৃত কার্ড গ্রহণসহ সব কাজ উপজেলা নির্বাচন অফিসে সম্পন্ন করা হবে।
বর্তমানে জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত যে কোন কাজের জন্য দেশের প্রত্যন্ত এলাকার ভোটারদেরকেও রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ভোটার তালিকা প্রকল্প অফিসে আসতে হয়। এতে সময় ও অর্থ দুয়েরই অপচয় হয়। জানুয়ারি থেকে ভোটারদের এ ভোগান্তি হ্রাস পাবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান
ইভটিজিং সমস্যা ও প্রতিকার
ইভটিজিং বর্তমানে মারাÍকভাবে একটা সামাজিক ব্যাধির রূপ ধারণ করেছে। এই মারাÍক অপরাধ সংঘটিত হয় যুবসমাজের চারিত্রিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে। তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরীদের খোলামেলা ও অত্যাধুনিক হওয়ার প্রবণতা এবং আমাদের নীতিভ্রষ্ট ও নৈতিকতাবিবর্জিত সামাজিক অবস্থা এর জন্য দায়ী। এই সামাজিক সমস্যা ও তা সমাধানকল্পে বহু আলোচনা ও সমালোচনা শেনাা যায়। এই সামাজিক সমস্যা ও এর প্রতিবিধান সম্পর্কে যত গভীর আলোচনা ও কঠোর আইন প্রণয়ন করা হোক না কেন, ইভটিজিং যেসব কারণে হয় সেগুলো প্রথমে চিহ্নিত ও পাশাপাশি নিরসনের ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে এর প্রতিকার সহজে সম্ভব হবে না। ইংরেজিতে একটা কথা আছে চড়পংপষয়মসষ মঢ় দপয়য়পড় য়ভথষ ধৎড়প । ধর্মীয় অনুশাসন না মেনে চলা ও মেয়েদের পোশাক-পরিচ্ছদ ও আচার-আচরণে শালীনতা বজায় না রেখে চলাফেরা করার কারণেও ইভটিজিংয়ের প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পারিবারিকভাবে শৈশব থেকে মা-বাবাকে সন্তানদের চরিত্র গঠনে সচেষ্ট হতে হবে। সন্তানদের আচরণ, চলাফেরা, পোশাক-পরিচ্ছদ ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার প্রতি অভিভাবকদের সুদৃষ্টি রাখতে হবে। তাতে ইভটিজিং সমস্যার অনেকটা সমাধান হতে পারে। ইভটিজিংয়ের সাথে জড়িত বখাটে যবুকদের বেশির ভাগই প্রভাবশালী ও বিত্তশালীদের সন্তান-সন্ততি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রভাবশালীদের দেখা যায় অপকর্ম ঢাকার মাধ্যমে তাদের বখাটে সন্তানদের রক্ষা করতে। ওদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে লাঞ্ছিত হতে হয়,্ এমনকি কখনো কখনো মূল্যবান জীবনও হারাতে হয়। তার উদাহরণ নিরপরাধ কলেজ শিক্ষক মিজানুর রশীদ ও মমতাময়ী মা চাঁপা রানী ভৌমিক। ইভটিজিংয়ের ঘটনার শিকার অনেক নিপাপ তরুণী আÍসমানবোধে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে আÍহননের পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গেলে যখন দেখা যায় অপরাধী দলীয় লোক, তখন যথাযথ কার্যক্রম থেমে যায়। রাজনৈতিক প্রশ্রয়ের কারণে বেশির ভাগ অপরাধী পার পেয়ে যায়। যারা ইভটিজিং করবে রাজনৈতিক বিবেচনায় ছাড় না দিয়ে দলমত নির্বিশেষে তাদের জরুরি আইনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। সব অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে সরকারকে নিরপেক্ষভাবে সক্রিয় হতে হবে।
সিনেমা, নাটক, টেলিভিশনে মেয়েদের অশ্লীল পোশাক-আশাক ও অঙ্গভঙ্গি পরিলক্ষিত হয়। সিনেমা-নাটকে হাসি-ঠাট্টারছলে রাস্তায় নারীকে উত্ত্যক্ত করার দৃশ্য দেখানো হচ্ছে। অনেক প্রখ্যাত নাট্যাভিনেতা সেখানে অভিনয় করছেন। এতে বখাটেরা উৎসাহিত হচ্ছে এবং সমাজে বাড়ছে ইভটিজিংয়ের প্রবণতা। এ ধরনের নাটকেই এখন টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ভরে গেছে। এ ব্যাপারে সরকারিভাবে প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। পাশ্চাত্য অপসংস্কৃতির অধ অনুকরণ করে দেশীয় সংস্কৃতিতে এর সর্বগ্রাসী উপাদানগুলোর প্রচলন যুব সমাজকে উচ্ছৃংখল আচরণে উৎসাহিত করছে যুব সমাজের এই নৈতিক অবক্ষয় ইভটিজিং, ধর্ষণ ইত্যাদি অপকর্মের জন্য দায়ী। তাই আমাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির চর্চা ও সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে পাশ্চাত্য অপসংস্কৃতি থেকে মুক্ত হতে হবে। সাংস্কৃতিক জগৎ তথা চলচ্চিত্র ও নাট্যজগতে যারা আছেন তাদের ছবি ও নাটক তৈরিতে অশ্লীলতা বর্জনে সচেতন হতে হবে। ইভটিজিং প্রতিরোধের জন্য অবশ্যই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের জন্য দরকার সামাজিক সচেতনতা এবং ধর্মীয় ও নীতিবোধের অনুসরণ। রাষ্ট্রীয়ভাবে ইভটিজিংকে সামাজিক ব্যাধি হিসেবে ঘোষণা করা যেতে পারে এবং কঠোর আইন প্রণয়ন করে কঠিন শাস্তির বিধান রাখতে হবে। সেই সাথে আইনের প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে।প্রচার মাধ্যমে অর্থাৎ প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে ইভটিজিংয়ের মতো নিন্দনীয় অপরাধ প্রতিরোধকল্পে সামাজিকভাবে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। ইভটিজিংয়ের আইনগুলো ইলেকট্রনিক মিডিয়ার পাশাপাশি সিনেমা হলগুলোতে প্রতিটি প্রোগ্রামের আগে ও পরে এবং মিডিয়ার খবরের আগে ও পরে প্রচার করা যেতে পারে এবং এর ওপর একটা ডকুমেন্টারি তৈরি করে তা প্রচার করা যেতে পারে। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রদের নিয়মিত উপদেশমূলক শিক্ষা প্রদান করা যেতে পারে। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে মতবিনিময় ও আলোচনা এবং দেশব্যাপী র‌্যালির মাধ্যমে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে ও আইনগত দিকগুলো তুলে ধরতে হবে। রাস্তাঘাটে মেয়েদের উত্ত্যক্ত ও হয়রানির প্রতিবাদ করে গণসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ইভটিজিং নিরসনে বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক সংগঠন সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। ইভটিজিং প্রতিরোধকল্পে তরুণদের মধ্যে ধর্মীয় অনুশাসন ভিত্তিতে মানবিক মূল্যবোধ এবং পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে নৈতিক সচেতনতা ও ধর্মভীরুতা সৃষ্টি অপরিহার্য। এভাবে কঠোর আইনের পাশাপাশি গণসচেতনতার মাধ্যমে ধীরে ধীরে ইভটিজিং প্রতিরোধ সম্ভব হতে পারে।



পৃথিবী আজ রক্তের হোলি খেলায় মেতে উঠেছে
শহিদুল ইসলাম :: মোটাভাবে বলি। কার্ল মার্কস মানুষকে দুশ্রেণীতে ভাগ করেছিলেন। শোষিত ও শোষক। নোয়াম চমস্কি মার্কিন শোষক শ্রেণীকে দুভাগে ভাগ করেছেন। ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান। ইদানীং বাংলাদেশে খুনোখুনি বেড়ে গেছে।
 হঠাৎ করে ‘ইভ-টিজিং’ শব্দযুগলটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তার আগে সম্ভবত ২০০৪ সালে কোনো এক ছোটগল্পকার ‘ক্রস-ফায়ার’ নামে সে গল্পটি লিখেছিল, সেই গল্পটি হুবহু একই ভাষায়, একইভাবে দেশবাসীকে এখনো বোঝানো হচ্ছে। প্রতিদিন ‘ইভ-টিজিং’-এ প্রতিবাদ করতে গিয়ে স্কুল-শিক্ষক, মেয়ের মা-বাবা-চাচা-ভাতিজা ‘ইভ সন্ত্রাসীদের’ হাতে নানাভাবে নিহত হচ্ছেন। এতে রাষ্ট্রের টনক নড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তা হচ্ছে না। ফলে ‘ইভ সন্ত্রাসীরা’ মনের সুখে তাদের অপকর্ম চালিয়ে যেতে পারছে। দেশ-বিদেশের মানবাধিকার সংস্থা গত প্রায় ৬ বছর ধরে ক্রসফায়ারকেও একটি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বলে তা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে আসছে। কোনো সরকারের কানে সে আহ্বান পৌঁছাচ্ছে না। নিয়মিত ক্রসফায়ার চলছে। মানুষ মরছে। তদুপরি গত ২৯ অক্টোবর ২০১০ শুক্রবার দৈনিক সমকালের ব্যানার হেডের সংবাদে জানা গেলো র‌্যাব কতো ঠাণ্ডা মাথায় রূপগঞ্জের মাসুদ, সাইফুল ও শমসের নামের তিন যুবককে হত্যা করে ‘লাশ গুম’ করে ফেলেছে। তার প্রত্যক্ষদর্শী ইউসুফগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র শান্তর মুখে সে লোমহর্ষক কাহিনী দেশবাসী ইতিমধ্যে জেনে গেছেন। তাই আমার মাথায় মানুষের ওই শ্রেণী-বিভাজনের কথা উঠে এলো। মার্কস ও চমস্কির মতো বাংলাদেশের খুনিদের দুভাগে ভাগ করা যায়। এক. সরকারি, দ্বিতীয়. বেসরকারি। সরকারি বাহিনীসমূহের হাতে বৈধ সরকারি অস্ত্র থাকে আর বেসরকারি খুনিদের হাতে থাকে অবৈধ অস্ত্র। সরকারি বাহিনী, যাকে আদর করে বলা হয় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা বাহিনী যে খুন করে তা ‘খুন’ নয়Ñ সন্ত্রাসী নিধন। তা আইনের ঊর্ধ্বে। বেসরকারি খুনিরা এ সুবিধা পায় না। তারা মানবজাতির ভয়ানক শক্রু। কিন্তু উভয়পক্ষের তৎপরতার ফল একই। মানুষের মৃত্যু।
দুই. বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সঙ্গে খুনের এই মহোৎসব আমাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রীয় ‘গণতন্ত্রের’ কথা মনে করিয়ে দেয়। ইরাকের প্রাক্তন ‘সন্ত্রাসী’ সাদ্দাম হুসেনকে ক্ষমতাচ্যুত ও ফাঁসি দিতে যুক্তরাষ্ট্রের মিথ্যাচার আজ প্রমাণিত সত্য। এক ‘সাদ্দামকে’ সরাতে এক লাখেরও বেশি সাধারণ মানুষ হত্যা করেছে মার্কিন বাহিনী। এবং তার ভৃত্য প্রধানমন্ত্রী মালিকি এখনো মানুষ হত্যা বন্ধ করেনি। ইরাকের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী ও সাদ্দাম হুসেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী তারিক আজিজকে হত্যা করার ঘোষণা দিয়েছে। ইরাক যুদ্ধ ছিল বেআইনিÑ মানবতাবিরোধী। এটা আজ সবাই স্বীকার করেন। তাহলে তারিক আজিজকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করার কোনো নৈতিক অধিকার বর্তমান ইরাক সরকারের থাকতে পারে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ ঘোষণা সারা বিশ্বময় ‘সন্ত্রাস’ ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করেছে। ফলে মার্কিনি অস্ত্র ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে। সৌদি আরবের মাধ্যমে পৃথিবীর বড় বড় সন্ত্রাসীদের কাছে অস্ত্র পৌঁছে দেয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশাল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র সৌদি আরবের কাছে বিক্রি করছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এ পর্যন্ত মোট ৪০টি গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করেছে এবং স্বৈরাচারী একনায়কবিরোধী মোট ৩০টিরও বেশি গণআন্দোলনকে বলপ্রয়োগ করে দমন করতে সাহায্য করেছে। এখনো ৭০টি দেশে মার্কিন সেনাবাহিনী মোতায়েন রাখা হয়েছে এটা দেখার জন্য যে ঐসব দেশে যেন কিছুতেই গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যে বিশ্বটি গণতান্ত্রিক বিশ্ব হতে পারতো, তা না হয়ে একটি সন্ত্রাসী বিশ্বে পরিণত হওয়ার পেছনের পুরো কৃতিত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। আফগানিস্তানে আজ ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ পরিচালনা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সোভিয়েত ইউনিয়ন সরে আসার সময় যে চুক্তি হয়েছিল, সে সম্পর্কে সে সময়ের সোভিয়েত নেতা গরবাচেভ আজ বলছেন ‘আমরা আশা করেছিলাম আমেরিকা তার ওয়াদা রক্ষা করবে। যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল তা পালন করবে। সে চুক্তিতে আফগানিস্তানকে একটি নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা হয়েছিল। আমেরিকাও সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার অঙ্গীকার করেছিল। মার্কিন সরকার সব সময় বলে আসছে, তারা এ প্রতিশ্র“তি রক্ষা করবে। কিন্তু একই সঙ্গে তারা সন্ত্রাসীদের ট্রেনিং দিয়েছেÑ তাদের হাতে ট্রেনিংপ্রাপ্ত সন্ত্রাসীরা আজ আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা অব্যাহত রেখেছে।’ (ঞযব উধরষু ঝঃধৎ ২৮.১০.২০১০)। এতে গরবাচেভ অবাক হতে পারেন, কিন্তু এটাই তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক চরিত্র।
তিন. পাঠকের মনে প্রশ্ন উঠতে পারে ইভ-সন্ত্রাসের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কি? উইকিলিকসে লক্ষাধিক মার্কিন গোপন নথি প্রকাশিত হওয়ার পর এ প্রশ্ন ওঠার কথা নয়। কারণ সেসব গোপন নথি প্রমাণ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে পৃথিবীর দেশে দেশে তার সন্ত্রাসবাদ অব্যাহত রাখে। তারা যে রাষ্ট্রকে টার্গেট করে, সেই দেশের সংবাদপত্র ও মিডিয়া জগৎ কিনে ফেলে। সেসব দেশের প্রথম সারির বুদ্ধিজীবীদের অর্থের বিনিময়ে ছোট-বড় সমাজ গবেষণায় নিয়োগ করে তাদের ইচ্ছা পূরণের তথ্য সরবরাহ করার জন্য। সেসব দেশের সমাজবিরোধীদের সঙ্গে তারা গড়ে তোলে এক নিবিড় সখ্য। তারা যেমন সন্ত্রাসীদের ডলার ও অস্ত্র সরবরাহ করে, তেমনি তাদের জব্দ করার বাহিনীকেও অস্ত্র-অর্থ প্রদান করে। তারা সমাজে বিরাজিত দ্বন্দ্বগুলো সক্ষমভাবে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে। তারা সরকার ও বিরোধী দল উভয়পক্ষকে হাতে রাখে। উভয়ের সাহায্যে সমাজে ধর্মান্ধতার অন্ধকার ছড়িয়ে দেয়। সমাজে যুব-সমাজকে বিপথগামী করতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে। বিশেষত আমাদের মতো দরিদ্র দেশে, যে দেশের কিশোর-যুবকেরা কাজ পায় না, সেসব দেশ তাদের জন্য স্বর্গভূমি। একটু ভালো করে লক্ষ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের রাজনীতি যেমন দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, তেমনি এ দেশের বিজ্ঞ আইনজীবী, বুদ্ধিজীবী, শ্রমিকশ্রেণী, শিক্ষক সমাজসহ সবাই যেমন দুটি শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছে ঠিক তেমনি এ দেশে সন্ত্রাসীরাও উভয় শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। সন্ত্রাসীদের গায়ে হাত দিলে অপরপক্ষ গলাবাজি করে উঠবে। ফলে সন্ত্রাসীরা রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়ে বেড়ে ওঠে। এই ‘ইভ-সন্ত্রাস’ আজকের নয়Ñ বহু পুরোনো। সিমি, ইয়াসমীনদের প্রাণ দিতে হয়েছে এদেরই হাতে। রাষ্ট্রীয় ‘আইনশৃঙ্খলা’ বাহিনী সেদিন ‘সন্ত্রাসীদের’ পক্ষেই দাঁড়িয়েছিল। আজো তার ব্যত্যয় হয় না। র‌্যাবের মহাপরিচালক বলেছেন যে র‌্যাবের গুলিতে তিনজন মারা গেছেÑ এ ধরনের অভিযোগ কেউ তাদের কাছে করেনি। আর রূপগঞ্জ থানার ওসি ফোরকান শিকদার বলছেন, ‘নিখোঁজ তিনজনের পরিবারের পক্ষ থেকে জিডি করার পর তারা সারা দেশে সব পুলিশ স্টেশনে তারবার্তা পাঠিয়েছেন।’ র‌্যাব ও পুলিশ দুটিই সরকারি বাহিনী। তাদের দুজনের এ দুধরনের বক্তব্যের জবাব সরকারকেই দিতে হবে। ওদিকে ফরিদপুরের মধুখালীতে ‘টিজ-সন্ত্রাসীর’ মোটরসাইকেলে নিহত চাঁপা রানী ভৌমিকের কেস থানা শেষ পর্যন্ত গ্রহণ করেছে। প্রথমে নিতে চায়নি। কিন্তু ঘাতক রনি, আলমগীর ও সঞ্জয়কে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। কারণ হিসেবে কাগজে যেটুকু এসেছে তাতে বোঝা যায় ঘাতকদের পেছনের রাজনৈতিক শক্তি বেশ শক্তিশালী।
চার. প্রাপ্ত  তথ্য অনুসারে দেখা যায়, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর থেকেই ‘ইভ-সন্ত্রাস’ বেড়ে চলেছে। ২০০৯ সালে সারা দেশে প্রকাশিত ইভ-টিজিংয়ের সংখ্যা ছিল ৪৮টি। আর এ বছর আগস্ট পর্যন্ত তা ৩৫০-এর ওপরে পৌঁছে গেছে। দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, সমাজবিজ্ঞানী ও মানবাধিকারকর্মী, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে এ সামাজিক ব্যাধির মূলোচ্ছেদ করতে আহ্বান জানিয়েছেন। তবে এ কথা অস্বীকার করা যায় না যে সরকারের ওপর এর মূল দায়িত্বটা বর্তায়।
মনে রাখা দরকার ইয়াসমীনকে ধর্ষণ ও হত্যা করেছিল এ দেশেরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোক। তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে দিনাজপুরে সাতজন মারা যান তাদেরই হাতে। সে সময়ও ধর্ষক ও খুনি পুলিশের বিরুদ্ধে কেস নিতে গড়িমসি করেছিল স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ি। কিন্তু উচ্চতম আদালতের রায়ে তাদের ফাঁসি হলে প্রমাণ হয় যে তারাই ছিল ইয়াসমীনের ধর্ষণকারী ও হত্যাকারী। আজ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর সে মনোভাবের কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যায় না। তাই এ দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সুরে সুর মিলিয়ে বলতে চাই ‘টিজ-সন্ত্রাসের’ বিরুদ্ধে সামাজিক ও রাজনৈতিক শক্তিকে শাণিত করতে হবে। তবেই এ সন্ত্রাস বন্ধ হতে পারে। পৃথিবীর সব বড় ও ভালো কাজ সাধারণ মানুষের সম্মিলিত শক্তিরই ফল। তাই অনেকটা স্লোগানের মতো শোনালেও বলতে ইচ্ছা হয় ‘মানুষ ঐক্যবদ্ধ হন। এসব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়ে দাঁড়ান।’
পুনশ্চ : লেখাটি পাঠানোর আগে ৩০ অক্টোবরের সমকালে দেখা গেলো, ‘র‌্যাব’ সম্পর্কে ২৯ অক্টোবর শুক্রবার সমকালে যে খবর ছাপা হয়েছে তাকে ‘ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক’ বলে একটি বিবৃতি ছাপানো হয়েছে। র‌্যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় যে, প্রকাশিত সংবাদে রূপগঞ্জের স্থানীয় স্কুল ছাত্র শান্তর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ওই দিনের ঘটনায় র‌্যাবের গুলিতে নিহত সাইদুল ইসলাম ও আবদুল আলীম মাসুদের লাশ সে স্বচক্ষে র‌্যাবের গাড়িতে দেখেছে। র‌্যাব সদস্যদের নির্দেশে বালু নদী থেকে পানি এনে রাস্তায় জমাট বাঁধা রক্ত সে ধুয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ওইদিন রূপগঞ্জের আইন-পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবও সেখানে দায়িত্ব পালন করে। পুলিশ ও র‌্যাব আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার সময় কতিপয় স্থানীয় উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি আহত হয় এবং একজন পরে চিকিৎসারত অবস্থায় হাসপাতালে মারা যায়। এ খবর পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশিত হয়। এ অবস্থায় র‌্যাবকে জড়িয়ে এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ অনাকাক্সিক্ষত ও দুঃখজনক। তাছাড়া একই সংবাদে কতিপয় স্থানীয় ব্যক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত তথ্যও ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক।
শহিদুল ইসলাম : সাবেক অধ্যাপক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, কলাম লেখক।

রাস্তায় হাটার সময় মোবাইলে ম্যাসেজ লেখা ঝুকি!
ব্যস্ততা, হাটছেন রাস্তায়,সময় কম, মনে পড়ে গেল বন্ধু বা কোন গুরুত্বপূর্ন কথা।এখনই ম্যাসেজ পাঠানো উচিত।কী?শুরু করবেন ম্যাসেজ লেখা।কি হতে পারে রাস্তায় হাটার সময় ম্যাসেজ লেখার ফলাফল?এ ব্যপারে এসটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.জোনানা লুউমডসেন জানান,প্রতি ১০ জন মোবাইল গ্রাহকের মধ্যে ১ জন ইতোঃমধ্যেই রাস্তায় হাটার সময় ম্যাসেজ লেখার ফলে আহত হয়েছেন।

তিনি তার গবেষণা থেকে জানিয়েছেন,মোবাইল ফোনে ম্যাসেজ লেখতে আমাদের ব্রেইনের শক্তির অনেকটুকু অংশ ব্যবহৃত হয়।

যার ফলে আমরা রাস্তায় হাটার সময় সম্ভাব্য বিপদ গুলো বুঝতে পারিনা।মোবাইল ফোনের গঠন কাঠামো এমন যে এতে ম্যাসেজ লেখার সময় আমাদের দৃষ্টি শক্তি ও মানসিক প্রক্রিয়াগুলোর বিশাল অংশ শুধু এই কাজেই ব্যস্ত রাখতে হয়।

যাতে করে আমরা প্রতি পাচটি সম্ভাব্য বিপদের মধ্যে একটি বুঝতে পারিনা।

তিনি আরো জানান,রাস্তায় হাটার সময় মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে লন্ডনে প্রতিদিন দুই জন তরুন সড়ক দূর্ঘটনার শিকার হন।যাদের কেউ কেউ মৃত্যুর কোলে পতিত হয়।

অধ্যাপক ড.জোনানা লুউমডসেন জানান, ব্যস্ততার মধ্যে যেমন রাস্তায় হাটার সময় নিরাপদে ম্যাসেজ লেখার উপযোগি মোবাইলের ডিজাইন করা উচিত।

এর জন্য তিনি গবেষণা করছেন বলে জানান।তিনি বলেন,কন্ঠ স্বর,কিংবা আমাদের অংগ-ভংগি বুঝতে পারে এমন ভাবে মোবাই্লের ডিজাইন করলে আমরা ঐ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে পারি।
সুত্র: ইন্টারনেট
 ঈশ্বর আছে কি নাই? বিজ্ঞান কি বলে? ধর্ম কি বলে? নাস্তিক কি বলে?
বর্তমান সময়ে পদার্থ বিজ্ঞানের শ্রেষ্ট বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং মনে করেন “দুনিয়া বিজ্ঞানের নিয়ম মেনেই চলে. এমন হতে পারে নিয়মগুলো ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন কিন্তু তিনি নিয়মের ব্যত্যয় ঘটানোর জন্য কখনো হস্তক্ষেপ করেন না”।
প্রথম আলোতে ৭/৮ বছর আগে স্টিফেন হকিং এর একটা লেখা ছাপা হয়েছিল। হেডলাইনটি ছিল এমন'' ঈশ্বরের মন বোঝার চেষ্টায় হকিং''। লেখাটি সংগ্রহ করেছিলাম। কিন্তু এখন আর আমার কাছে নাই।
সেই লেখার মূল ভাবটি ছিল এমন, কোন কিছুর সৃষ্টি নিয়ে গবেষনা করতে গেলে দেখা যায় সেই সৃষ্টির মূল উৎস খুঁজে পাওয়া এখন পর্যন্ত মানুষের পক্ষে সম্ভব হয়নি। বিজ্ঞান অনেক কিছু আবিষ্কার করেছে কিন্তু মহাবিশ্বের অপার রহস্যের ক্ষুদ্রতম অংশও এখনও উম্মেচন করা সম্ভব হয়নি।
স্টিফেন হকিং লেখার এক পর্যায়ে বলেছিল গবেষণার এক পর্যায়ে গিয়ে যখন তিনি আর কোন কিছুই আবিষ্কার করতে অক্ষম হয় তখন তিনি মনে করেন ''অবশ্যই ঈশ্বর আছেন।''

ব্যাপারটা অনেকটা এমনঃ
কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় তার জন্ম কি করে হয়েছে সে হয় তো বলবে তার বাবার বীর্য থেকে শুক্রানো মায়ের ডিম্বানো গ্রহন করার পর তার সৃষ্টি হয়েছে।

-কিন্তু সেই বীর্য ও ডিম্বাণু কে সৃষ্টি করেছেন?
-বলবে তাদের শরীর থেকে সৃষ্টি হয়ে গেছে।
-তাদের শরীর কোথা থেকে সৃষ্টি হয়েছে?
-তাদের বাবা মায়ের শরীর থেকে

ওকে, ধরে নিলাম সে তার জন্ম সূত্রে পেয়েছে?
-তাদের জন্ম কোথা থেকে হয়েছে?
-তাদের বাবা মা থেকে

-তাদের বাবা মা কোথা থেকে এসেছে?
-তাদের বাবা মা থেকে....

-তাদের বাবা মা কোথা থেকে এসেছে?
-তাদের বাবা মা কোথা থেকে এসেছে?
........................
......................
..................
.........................

এভাবে প্রশ্ন করতে থাকলে তারা হয় তো জবাব দেবে তাদের জন্ম হয়েছিল কোন বান্দর থেকে?
সেই বন্দর কোথা থেকে সৃষ্টি হয়েছিল?
আরেক জোড়া বান্দর থেকে।

তাদের জন্ম কোথা থেকে হয়েছে?
আরেক জোড়া বান্দর থেকে
...............................
..............................
এভাবে প্রশ্ন করতে থাকলে এক পর্যায়ে এসে বিজ্ঞান, চুপ
বিজ্ঞানীও চুপ। নাস্তিকেরার আরো বেশী চুপ।

ঠিক এখানে এসেই হকিংয়ের মনে হয় হ্যাঁ ঈশ্বর বলে কেউ আছে।

পদার্থবিজ্ঞানীরা যদিও গত প্রায় ৪০০ বছর যাবৎ প্রকৃতিকে বোঝার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তা সত্ত্বেও প্রকৃতিতে এখনও অনেক সমস্যা রয়ে গেছে যেগুলোর যথাযথ ব্যাখ্যা আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলে পদার্থবিজ্ঞান এখনও একটি সক্রিয় শাস্ত্র; বিশ্ব জুড়ে হাজার হাজার গবেষক পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণায় রত। অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় বর্তমানে পদার্থবিজ্ঞানে গবেষণার পরিমাণ ও পরিসর দুই-ই অনেক বেশি। পদার্থবিজ্ঞানের আধুনিক তত্ত্বগুলি কেবল প্রকৃতির আরও গভীরতর বর্ণনাই দেয়নি, এর অনন্য ও রহস্যময় রূপ আমাদের কাছে আরও পরিষ্কার করে তুলেছে। সূত্রঃ ইন্টানেট
 নিরাপদ যৌন সম্পর্কে অধিকার রক্ষা করবে পুলিশ
আল আমিন : পাবলিক সেক্স এনভায়র্নমেন্টে যৌন সম্পর্ককারীদের হিউম্যান রাইটস রক্ষায় পুলিশের কার্যকরী ভূমিকার পাশাপাশি যৌন সম্পর্ককারীদের অযথা হয়রানি রোধে শক্তিশালী ভুমিকা পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে স্কটল্যান্ড পুলিশ কর্মকর্তাদের দেয়া কুসংস্কার কেন্দ্রিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণ নির্দেশিকায়।
যদিও উন্মুক্ত পরিবেশে যৌনতায় লিপ্ত হওয়া বেআইনি তথাপি কুসংস্কার কেন্দ্রিক অপরাধগুলোর শিকার হওয়ার থেকে সুরক্ষার অধিকার তাদের আছে বলে ওই নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়।
এসোসিয়েশন অব চিফ পুলিশ অফিসার্স অব স্কটল্যান্ড কতৃক প্রকাশিত ওই নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয় , ‘উন্মুক্ত পরিবেশে যৌনসম্পর্ক স্থাপনকারীরা নানা ধরনের কুসংস্কার কেন্দ্রিক অপরাধের শিকার হয় । যার ফলশ্রুতিতে তারা নানা ধরনের মানসিক যন্ত্রণায় ভুগে’।
এ ব্যপারে  স্কটিশ পুলিশ ফেডারেশনের সভাপতি, লেস গ্রে বলেন, ‘কেউ অস্বাভাবিক কোন কাজ করলে তার আইনের কাছ থেকে সুরক্ষা পাবার অধিকার ক্ষুন্ন হয় না।
তবে তারা আইনগতভাবে যতটুকু সহায়তা পাবার কথা ঠিক ততটুকুই পাবে’।
তবে উন্মুক্ত পরিবেশে যৌন সম্পর্ককারীদের সম্পর্কে পুলিশকে দেয়া নির্দেশের  সমালোচনা করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন  অফিসার বলেন, ‘আমাদেরকে যারা উন্মুক্ত পরিবেশে যৌন সম্পর্ক  স্থাপন করে শ্লীলতা বর্জিত কাজ করেছে তাদের জন্য অন্ধ হয়ে থাকতে, আর যারা ওই অশ্লীলতার বিরুদ্ধে কথা বলেছে তাদের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে বলা হচ্ছে’।
হুগ মেক্কিনেয়  বলেন, ‘যারা উন্মুক্ত পরিবেশে  যৌন সম্পর্ক স্থাপনের মত অশালীন কাজ করে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ পদক্ষেপ  নিবে এতটুকু প্রত্যাশাত আমরা করতেই পারি’।
কোন পরিবেশে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা হবে তার ব্যপারে ২০০৮ সালে প্রণিত এক আইনে উল্লেখ করা হয় যে, উন্মুক্ত পরিবেশে যৌন সম্পর্ক স্থাপনকারি ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার বিধান রাখা হয়েছে।
আসুন, আমরা নিজ নিজ ক্ষমতার দম্ভ দেখাই
সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ :: গল্পে আছে যে, ভাগ্নে মামার বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। মামা রেলওয়ে গেটকিপার। ভাগ্নে জানতে চাইলো যে মামার ক্ষমতা কী। ইতোমধ্যে একটি ট্রেন অতিক্রম করার সময় হয়ে এসেছে। মামা বললেন যে, তিনি ট্রেনটি থামিয়ে দেবেন।
লাল পতাকা প্রদর্শনের ফলে গাড়িটি থেমে গেলো। গার্ড নেমে এসে গাড়ি থামানোর কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ না পাওয়াতে ঘুষি মেরে গেটকিপারকে মাটিতে শুইয়ে দিলেন। তারপর ট্রেন চলে গেলো। এটা কি হলো ভাগ্নে তা জানতে চাইলে গেটকিপার বললেন যে, তিনি তার এবং গার্ড তার অর্থাৎ প্রত্যেকে নিজ নিজ ক্ষমতা দেখিয়েছেন। সম্মানিত পাঠক, একই দিনে কাগজে দুটো খবর পড়ে মনে হলো যে আমরা প্রত্যেকে বোধহয় গেটকিপার ও গার্ড হতে চলেছি। আজকাল বহু আন্তর্জাতিক দিবস পালিত হয়। মাথায় টোপর দিয়ে মিছিল হয়। তারপর সীমিতসংখ্যক শ্রোতা নিয়ে হয় সেমিনার। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার অভাব নেই। মিডিয়ার লোকজন আসেন। সেমিনারে অংশগ্রহণকারী কারো আবার এক কোনায় নিয়ে গিয়ে একক সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। আর কিছু সেমিনার বিশেষজ্ঞ আছেন। তারা হেন কোনো বিষয় নেই তা জানেন না। তারাই বক্তৃতা করেন। আর কারো সুযোগ নেই। এসবের পেছনে এনজিওদের আগ্রহ এবং অবদান বেশি। এসব দিবস পালন করা হয় গণসচেতনতা বাড়ানোর জন্য কোনো একটা বিষয়ে। তবে অবস্থাদৃষ্টে দেখা যাচ্ছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাল্লা দিয়ে অপরপক্ষ এতো শক্তিশালী হচ্ছে যে টোপর মাথায় দিয়ে বা বিশেষ বিশেষজ্ঞদের সেমিনার করে কাজ হচ্ছে না, যেমন যৌতুকের জন্য খুন এবং ইভটিজিং।
এই তো সেদিন নাটোরের এক তরুণ অধ্যাপক প্রাণ দিলেন ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে। আর যৌতুকের দাবি না মেটাতে পারায় নিত্য এসিডে ঝলসে যাচ্ছে নববধূর মুখ। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে, বিভাগীয় শহর খুলনা মেডিকেল কলেজে বার্ন ইউনিট নেই। যাহোক এই দুই ক্ষেত্রে প্রয়োজন সামাজিক প্রতিরোধ। এর জন্য প্রত্যেক ওয়ার্ডে সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি গড়ে তুলতে হবে। ইভটিজারদের সপরিবারে সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। শাস্তি দিতে হবে জনসমক্ষে। এর কোনো বিকল্প নেই। এখন আসি আজকের প্রসঙ্গে। বিশ্ব হাত ধোওয়া দিবসে মৌলভীবাজারে এক মিনি ডিসি অর্থাৎ ইউএনও মোঃ মোখলেসুর রহমান সরকার খুব ক্ষুব্ধ হলেন কারণ সবাই একসঙ্গে হাত ধোওয়া শুরু করলে শিশুরা হেসে উঠেছিল। শাস্তি হিসেবে সবাইকে কান ধরে উঠবস করানো হলো। একটি শিশু বসে পড়লে তার গালে চড় দেয়া হলো। খবরটা পড়ে হতভম্ব হয়ে গেলাম। একজন ইউএনও শিশুর সঙ্গে কতোটা বর্বর আচরণ করতে পারেন। যেখানে তার সরকার শিশুদের শারীরিক শাস্তি দিতে নিষেধ করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য উদগ্রীব। ইউএনও কি একবারো ভেবে দেখেছেন এ শাস্তি দেয়ার ফলে কোমলমতি শিশুদের মনে কতোটা আঘাত লেগেছে। ভবিষ্যতে নাগরিকের চিত্ত বিকাশে কী ক্ষতিটা তিনি করেছেন, অবশ্য ইউএনওর যদি সেসব চিন্তা করার ক্ষমতা থাকে। কেননা তা থাকলে এরকম হতো না। তাহলে আর ১৯৪ জন ছাত্রছাত্রীকে খোলা মাঠে কান ধরে উঠবস করাতেন না।
পাবনা জেলা প্রশাসনের কয়েকজনের চোখে পানি দেখে আমাদের বেশকিছু খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবীর হৃদয় ব্যথিত হয়ে উঠেছিল। তারা কি একবার কল্পনা করবেন যে নাটোরে শাস্তি পাওয়া কোমলমতি শিশুদের মুখ কতোটা মলিন এবং অসহায় হয়ে উঠেছিল। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরেক কাঠি সরস। তিনি বলেছেন যে ছেলেরা একটু উচ্ছৃঙ্খল হওয়ায় স্যার শাস্তি দিয়েছেন। এহেন পদলেহনকারী শিক্ষকের কাছে ছেলেমেয়েরা প্রকৃত শিক্ষা পাবে না। তাকে অবিলম্বে শিক্ষকের পেশা থেকে অপসারণ করা প্রয়োজন। আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানাচ্ছি এবং সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের অভিভাবকদের সোচ্চার হওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। দলমতনির্বিশেষে তাদের উচিত এরপর ঐ শিক্ষককে স্কুলে প্রবেশ করতে না দেয়া। এই অনুষ্ঠানের আয়োজক প্রতিষ্ঠানের নাম এফআইডিভিবি। এই সংস্থার কর্মকর্তা সত্যনারায়ণ নাইডু নির্লজ্জের মতো একে সমর্থন জানিয়েছেন। বুঝাই যাচ্ছে, এই প্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম কল্যাণমুখী নয়, শুধু কর্তৃপক্ষকে খুশি রেখে মালপানি কামাইয়ের ধান্দায় রয়েছে।
এবারে আরেকটা সংবাদে আসি। চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া থানার ওসির গলা টিপে ধরেছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান। উপজেলা পরিষদ অফিসে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা চলছিল। কারা নাকি কী দাবি নিয়ে মিছিল করে আসছিল। চেয়ারম্যানের আশ্বাসে তারা ফিরে গিয়েছে। এরপরও ওসি নাকি শুনে থানাকে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছিলেন। এতে চেয়ারম্যান-ওসিতে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে চেয়ারম্যান ওসির গলা টিপে ধরলেন। অবশ্য উল্টোটাও হতে পারতো। কথায় বলে অনেক সময় নৌকাও গাড়িতে ওঠে। যাক এসব কথা। চেয়ারম্যানের কথায় যদি সত্যি মিছিলকারীরা শান্ত হয়ে ফেরত গিয়ে থাকে, তাহলে ওসির ঐ মুহূর্তে আর কোনো ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন ছিল না। পরে চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ নিতে পারতেন। তাই বলে চেয়ারম্যান কোনো অবস্থাতেই এই কাজটি করতে পারেন না। সামাজিক, নৈতিক এবং আইনের বিচারে এটি অত্যন্ত অন্যায় কাজ। বিশেষ করে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের মতো একজন দায়িত্বপূর্ণ ব্যক্তির জন্য। এহেন একজন ব্যক্তি যদি ক্রোধে দায়িত্ব ও কর্তব্যজ্ঞান হারিয়ে ফেলেন, তাহলে তিনি কী দেবেন তার উপজেলাকে, তার নির্বাচকদের। জনগণ তো মাস্তানি করার জন্য তাকে ভোট দেয়নি। চেয়ারম্যান কি হাইপ্রেসারের রোগী। তাহলে খুবই সাবধান হওয়া উচিত। এতে তার নিজেরও শারীরিক ক্ষতি হতে পারে। আর যদি মাথা গরম হওয়ার রোগ থাকে, তাহলে মাথা ঠাণ্ডা রাখার তেল ব্যবহার করা উচিত। কিন্তু কোনো অবস্থাতে এরকম কাজকে সমর্থন জানানো যায় না, বরঞ্চ তীব্র ভাষায় নিন্দা জ্ঞাপন করতে হয়।
দুই.
জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল থেকে জানানো হয়েছে যে, বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৪৪ লাখ। এই হারে জনসংখ্যা বাড়তে থাকলে ২০৫০ সালে জনসংখ্যা হবে ২২ কোটি। জনসংখ্যা এই হারে বৃদ্ধির ফল কী হচ্ছে বা হবে তা সবাই জানেন। এ নিয়ে আলোচনার তেমন কিছু নেই। তবে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে, জনসংখ্যা অধিদপ্তরের কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে গেছে এবং এই কাউন্টে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি ব্যর্থ মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক এন্ড হেলথ সার্ভে ২০০৭ অনুযায়ী বর্তমানে মাত্র ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ মহিলাকে বাড়ি গিয়ে মাঠকর্মীরা সেবা দিয়ে আসছেন। ১৯৯৩-৯৪ সালে এর হার ছিল ৪৩ শতাংশ। ১৯৯৭-৯৮ সালে তা কমে ৩৫ শতাংশে নেমে আসে। আর বেশি কমে পরবর্তী ২ বছরে। ১৯৯৯-২০০০ সালে এসে দাঁড়ায় ১৮ শতাংশে। সে সময় একজন জেলা পরিবার-পরিকল্পনা অফিসার আমাকে বলেছিলেন যে, পরিবার-পরিকল্পনার কাজ মুখথুবড়ে পড়বে তার কারণ স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে এদের সবৎমব করে দেয়ার ফলে এদের ভেতর হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। তখন আমি কথাটা বুঝিনি। এ ব্যাপারে আমার কোনো স্বচ্ছ ধারণা নেই। তবে এখন এই তথ্য দেখে কথাটা মনে পড়লো। বগুড়া জেলার তৎকালীন জেলা কর্মকর্তা আমাকে এই কথা বলেছিলেন। তবে কিছু একটা ঘটেছিলÑ নইলে এরকম হবে কেন? আমাদের দেশে সরকারি কর্মকর্তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তাই যার যখন যা মনে হয়, তাই করে বসেন। অনেক আগের একটা ঘটনা মনে পড়লো। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে ‘বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন’ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি। হঠাৎ এক জ্ঞানী সচিব এর নতুন নাম করালেন ‘বাংলাদেশ কৃষি উপকরণ বিক্রয় ও সরবরাহ সংস্থা’। বহু টাকা ব্যয় হলো সাইনবোর্ড এবং প্যাড বদলানোর জন্য। আবার যে মাথা, সেই মাথা জেলা কৃষি অফিসার, তার পদমর্যাদায় উন্নতি ঘটাতে এ নাম যে অন্তরায় হয় না সেটা যে কোনো বেকুবও বোঝে। না, তাদের নামকরণ করা হলো জেলা সম্প্রসারণ কর্মকর্তা। বিশ্বের সকল বিভাগের সম্প্রসারণে কাজের ঠিকাদারি নিশ্চয়ই তাদের দেয়া হয়নি। যাহোক ব্যক্তিবিশেষের খেয়াল চরিতার্থ করতে গিয়ে কি কল্যাণ হয় তা কেউ ভেবে দেখেন না।
যাহোক আশা করি, সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে পরিবার-পরিকল্পনার কার্যক্রমকে শক্তিশালী করতে। আর রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায় থেকে বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি দেয়া হোক। বিশ্বের আরো দেশে জনসংখ্যা কমছে, সেখানে আমার দেশের লোক গিয়ে ঘাটতি পূরণ করবে, এরকম ধারণার সহজ সরলীকরল করে আত্মতৃপ্তিতে ভোগা ঠিক হবে না।
আর একটি বিষয় লক্ষ  রাখা উচিত। বিত্তশালী এবং শিক্ষিত পরিবার, সন্তান লাভের ব্যাপারে বেশ সচেতন। সোজা কথায় তারা কোনো অবস্থাতে দুই সন্তানের অধিক চাচ্ছেন না। পক্ষান্তরে নিুবিত্তের ভেতর এটি কম অনুসরণ করা হচ্ছে। ফলে সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট হতে চলেছে। এতে সামাজিক অস্থিরতা বাড়বে। তা বিপজ্জনকও হয়ে যেতে পারে।
সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ : সাবেক ইপিসিএস, কলামিস্ট।
 দুর্ঘটনা এবং দুর্ভাবনা
মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী :: দুর্ঘটনা শব্দটির সরল অর্থ অশুভ দুঃখজনক ঘটনা এবং সেটা কোনো ব্যাক্তি বা ব্যক্তিবর্গের ইচ্ছাকৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃত হতে পারে কিংবা কোনো ব্যক্তির কারণে নয়, দৈবাৎও হতে পারে।
আমার আজকের লেখাটির বিষয় হচ্ছে অনিচ্ছাকৃত দুর্ঘটনা এবং সেখানে যার কারনে দুর্ঘটনা তার বা তাদের অসাবধানতা কিংবা বোকামি থাকতে পারে। এমন দুর্ঘটনার খবর দুনিয়ার সবখানেই প্রতিদিন সংবাদপত্রে ছাপা হচ্ছে। আরো স্পষ্ট করে বললে বলতে হয়, বাংলাদেশের অনিচ্ছাকৃত দুর্ঘটনার কারণে আমার যে দুর্ভাবনা প্রিয় পাঠক-পাঠিকাদের সেটি জানাতে এই লেখাটির জন্ম হচ্ছে। এবং কেন আপনাদেরকে জানাবার জন্য মন তাগিদ দিচ্ছে সেটাও বলতে হয়।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রটিকে আমি আপনি সবাই ভালোবাসি, কেননা এই রাষ্ট্রটির ভৌগোলিক সীমানার মায়ায় আমরা বাঁধা পড়েছি। শুধু কি তাই? এটা আমাদের স্বদেশ, এই রাষ্ট্রটির আমরা যৌথ মালিক। এই বোধ দিয়েই আমরা আমাদের দেশকে ভালোবাসি। ধানের ক্ষেতে এইভাবেই বাতাস খেলে যায়, সে কারণেই কিংবা সরষের ক্ষেতে এইভাবেই হলুদ রঙের নাচন খেলে যায়, সে কারণেই কিংবা আকাশের আলো নিভিয়ে কালো মেঘে এইভাবে ছেয়ে যায়Ñ সে কারণেই কিংবা ঝড়ো হাওয়ার সাথে এইভাবেই অবিরাম বৃষ্টি ঝরেÑ সে কারণেইঃ এইরকম হাজার হাজার কারণ থাকতে পারে যার অনেকগুলো বিষয়ে আমরা সচেতনও নই, কিন্তু সেগুলো আমাদের রক্তে বংশপরম্পরায় মিশে আছে। তাই আমাদের আকাক্সক্ষাÑ এ দেশে জন্ম আমার, যেন এ দেশেতেই মরি। এবং এখানেই শেষ হয় না, সে আকাক্সক্ষাÑ ‘আবার আসিব ফিরে এই বাংলায়, হয়তো মানুষ নয়, হয়তো ভোরের কাক হয়ে’। আশা এ প্রগাঢ় স্বদেশ প্রেমের কারণে আমার দুর্ভাবনা এবং সেটি এই একটি শব্দেই আবদ্ধ নয়, আমার দুর্ভাবনার অর্থ আমার দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ ও অমঙ্গল-আকাক্সক্ষাও।
এই যে স্বদেশ প্রেমের প্রেক্ষাপটে আশা-আকাক্সক্ষাগুলো সেগুলো মূর্ত হয় রাষ্ট্রের সংবিধানে। তাই সংবিধান সব দেশেরই নাগরিকদের আদরের ধন বংশপরম্পরায় পবিত্র দলিল এবং এই সংবিধানই সমাজের রাজনৈতিক সংগঠন রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করে। বাংলাদেশের সংবিধানে ‘প্রস্তাবনা’ শিরোনামে যে প্রারম্ভিক জয়ধ্বনি করা হয়েছে সেটা জনগণেরই কণ্ঠস্বর “আমরা বাংলাদেশের জনগণ, ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসের ২৬ তারিখে স্বাধীনতা ঘোষণা করিয়া জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করিয়াছি”। অতঃপর এই জয়ধ্বনির ধারাবাহিকতায় সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদের ১ দফায় বলা হয়েছে, “প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে”।
অনেক দুর্ঘটনার তালিকা থেকে এখন দুটি দুর্ঘটনার বিবরণ দিবো। বিবরণ দুটির উৎস হচ্ছে সংবাদপত্রের প্রতিবেদন যা নিঃসন্দেহে নির্ভরযোগ্য। প্রথমটির বিষয়বস্তু হচ্ছে একটি যাত্রীভর্তি বাসের সলিল সমাধি। গত ১০ অক্টোবর রোববার সকাল আনুমানিক সোয়া ১১টার সময় যাত্রীভর্তি একটি বাস ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে আমিনবাজার পার হয়ে সালেহপুর সেতুর কাছে পৌঁছালে বাসটির সামনের একটি চাকা ফেটে যায়। কিন্তু বাসটি না থামিয়ে তার চালক ওই অবস্থাতেই দ্রুতগতিতে আর একটি দ্রুতগতিতে চলমান বাসকে ওভারটেক করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং বাসটি সেতুর ওপর থেকে ৪০ ফুট নিচে তুরাগ নদীতে উল্টো কচ্ছপের মতো আছড়ে পড়ে একেবারে তলিয়ে যায়। আট কিংবা দশজন যাত্রী সাঁতার দিয়ে তীরে উঠেছেন বাদবাকি সম্ভবত ৪০ কিংবা ৪৫ জন জলে দমবন্ধ হয়ে মারা গেছেন। প্রতিবেদকের মতে এবং সেটাই সঠিক মনে হয় চালক শুরু থেকে বেপরোয়া ও দ্রুতগতিতে বাসটি চালাচ্ছিলেন এবং এটাই দুর্ঘটনাটির মুখ্য কারণ। পরবর্তী খবরে জানা গেলো ৫৪ ঘণ্টা পরে বাসটি উদ্ধার করা গেছে, বেশিসংখ্যক যাত্রীর লাশ সম্ভবত নদীতে ভেসে হারিয়ে গিয়েছে।
অপরটির বিষয়বস্তু হচ্ছে সিরাজগঞ্জে ওই বাস দুর্ঘটনার পরের দিন বিকেল সোয়া ৩টায় ট্রেন দুর্ঘটনায় ৫ জন নিহত ও ১৫ জন আহত হয়েছেন। ১১ অক্টোবর মঙ্গলবার ওই সময়ে দিনাজপুর থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেন মুলিবাড়ী রেলওয়ে ক্রসিং অতিক্রম করার সময়ে দুর্ঘটনাটি হয়। তখন ওই এলাকায় বিএনপির জনসভা হচ্ছিল এবং সম্ভবত হতাহতরা ওই জনসভার শ্রোতা ছিলেন। সভামঞ্চের আশপাশসহ সে সময় পার্শ্ববর্তী রেললাইন জুড়ে মানুষের ভিড় ছিল। তারপরের ঘটনাগুলো আদৌ দুর্ঘটনা নয়, ইচ্ছাকৃত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। ট্রেনের একাধিক কামরায় আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়, যাত্রীরা প্রাণের ভয়ে জানালা দিয়ে বের হতে গিয়ে আহত হন ও তারা লুটপাটের শিকার হন। পরের খবরে জানা যাচ্ছে যাত্রীদের ব্যক্তিগত ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও রেল বিভাগের ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক কমপক্ষে ৩২ কোটি টাকা।
প্রথমে বর্ণিত ঘটনার জন্য সকরারি দল ও বিরোধী দলের কর্তব্য ছিল নিহত পরিবারদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করা ও প্রয়োজনবোধে তাদেরকে সাহায্য করা। এমন দুর্ঘটনাসহ কোনো সড়ক দুর্ঘটনা যেন না ঘটে তার জন্য উভয় দলের সংসদ সদস্যদের একটি যৌথ কমিটি গঠন করা এবং এই কাজ করতে হতো সংসদের অধিবেশনে বিতর্ক আলাপ-আলোচনা করে। দ্বিতীয় দুর্ঘটনার জের ধরে যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হয়েছে সেগুলো রাজনৈতিক কর্মীদের যে কর্মকাণ্ড হতে পারে তা আদৌ ভাবা যায় না এবং তাদের নেতাদের সেজন্য জনগণের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিত এবং যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে তাকে সহায়তা করা উচিত। এমত প্রক্রিয়াই আমরা দেখে আসছি সে সব দেশগুলোতে যেখানে সংসদীয় পদ্ধতির গণতন্ত্র চালু আছে। ইতিপূর্বে সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছি যে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং সেটার জের ধরে সহজেই বলা যায় যে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর ভোট দিয়ে এই ক্ষমতাটি জনগণ তাদের প্রতিনিধি বা সংসদ সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করে থাকেন। এই নির্বাচনে জনগণ কর্তৃক প্রদত্ত অধিক সংখ্যক ভোট পাবার কারণে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি জনপ্রতিনিধি হিসেবে স্বীকৃতি পান, নচেৎ তিনি একজন নির্বাচক বা ভোটার মাত্র এবং তার সঙ্গে অন্য ভোটারদের, তারা যতোই তার চেয়ে কম শিক্ষিত কিংবা কম বিত্তের হন না, কোনোই তফাৎ নেই। সংবিধানের চোখে সবাই একই মাপের বিত্তবান অর্থাৎ একটি করে ভোটের মালিক।
সরকারকে ফেলে দেয়া হবেÑ যার অর্থ কি এই যে রাজনৈতিক দলের নেতাদের এই হুঙ্কার, তা হলে তো জনগণ যে প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক এবং তারাই ভোটের মাধ্যমে সে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন এই তত্ত্বে তাদের বিশ্বাস নেই, কিংবা অন্যভাবে বলা যায় সংসদীয় গণতন্ত্রে তাদের আস্থা নেই। তাহলে গণতন্ত্রের ভিত, সমাজতন্ত্রের ভিত তো থাকে না।
সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা একটি বইয়ে সম্ভবত ‘দেশে বিদেশে’ নামের বইটিতে একটি চুটকি গল্প পড়েছিলাম। একজন আফগানিস্তানের নাগরিক কাবুল শহরের এক চৌরাস্তায় বক্তৃতা দিচ্ছেন, ভাইসব আসুন আমরা গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, আমলাতন্ত্র, রাজতন্ত্র সব গুঁড়িয়ে দেই। একজন শ্রোতা জিজ্ঞেস করলেন, তুই কি নৈরাজ্যবাদী? বক্তা চেঁচিয়ে উত্তর দিলেন, আসুন আমরা নৈরাজ্যতন্ত্রকে গুঁড়িয়ে দিবো। আমার দুর্ভাবনা, দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, অমঙ্গল-আশঙ্কা এই কারণেই।
স্বাধীন রাষ্ট্র একটি বিমূর্ত ধারণা এবং সংসদীয় গণতন্ত্রে সেটাই বাস্তব। এটাকে বলা যায় জনগণের জন্য সরকার ও জনগণের সরকার, কিন্তু জনগণের কর্তৃত্বের সরকার বলা যায় না। জনগণের কর্তৃত্বের সরকারের নকশা দেয়া আছে বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদ দুটিতে। সংসদীয় পদ্ধতির গণতন্ত্র বাংলাদেশে কার্যকর রাখতে হলে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হতে হবে। তার ব্যতিক্রম হলে ফ্যাসিবাদ খুঁটা গাড়ার সুযোগ পায়, যার নমুনা ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি। সুতরাং আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং ভেবে দেখতে হবে সংবিধানের ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদে দেয়া স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা চালু করা জরুরি কিনা। জনকর্তৃত্বের সরকার সহজেই ফ্যাসিবাদকে ঠেকাতে পারে, এমনকি ধ্বংসও করতে পারে।
মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী : সাবেক বিচারপতি, কলাম লেখক।

 উন্মুক্ত হচ্ছে ভিওআইপি
আমাদের দেশে সবকিছু আসে দেরিতেইতিবাচক বা ভাল দিক সমূহ আসতে যথেষ্ট সময় লাগে এদেশেবিশেষ করে প্রযুক্তি নিয়ে প্রায় প্রতিটি সরকারের মাঝে লক্ষ্য করা গেছে একপ্রকার উদাসীনতাএটা ঠিক যে, আমাদের প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাগণের যথাযথ প্রযুক্তি জ্ঞানেরও ঘাটতি রয়েছেতবে অনেক ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণের দক্ষতার অভাব না থাকলেও সর্বোচ্চ মহলের সুস্পষ্ট নির্দেশনার অভাবে ঐ প্রযুক্তির উপর যথাযথ উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয় নাএ ধরনের প্রযুক্তি বরং অবহেলিত হয়ে পড়েএই সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য সক্রিয় হয়ে ওঠে দেশী-বিদেশী মহলতারা এই প্রযুক্তিকে অবৈধ পথে কাজে লাগাতে তৎপর হয়এমনিভাবে আমাদের দেশে ভিওআইপি প্রযুক্তি নিয়ে কিছু কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়এর ফলে ভিওআইপি প্রযুক্তি দীর্ঘদিন অবৈধভাবে সমপ্রসারিত হতে থাকেএখানে বলা সমীচিন, কয়েক বছর ধরে এই প্রযুক্তিকে উন্মুক্ত করার কথা থাকলেও তা নিয়ে চলছিল নানা টালবাহানাতাছাড়া দেশী-বিদেশী এই চক্রটি প্রযুক্তিকে বৈধ পথে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা তৈরিতে সক্রিয় হতে থাকেতবে আশার কথা, শেষ পর্যন্ত এই ভোগান্তি ও অপেক্ষার পালা শেষ হতে যাচ্ছেএ মাসেই ভিওআইপি প্রযুক্তি উন্মুক্ত করা হচ্ছেনিঃসন্দেহে এটি আমাদের দেশের জন্য শুভ বার্তা বয়ে আনছেজানা গেছে, দেশে সাড়ে তিন হাজার ভিওআইপির অপারেটিং লাইসেন্স দেয়া হবেআর ভিওআইপির লাইসেন্স ফি নির্ধারণ করা হতে পারে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা
আধুনিক প্রযুক্তিতে টেলিফোন সেবা
বিশ্বে টেলিযোগাযোগ ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ঘটেছেএইসব দেশে অনেক সাশ্রয়ী পদ্ধতিতে টেলিফোনে কথা বলা সম্ভব হচ্ছেতাছাড়া এতে কথা বলা ছাড়াও আরো সুবিধা পাওয়া যাচ্ছেসেদিক দিয়ে আমরা এখনো পিছিয়ে রয়েছিপ্রচলিতভাবে আমাদের দেশে যে টেলিফোন সেবা পাচ্ছি তা সার্কিট সুইচিং পদ্ধতিতেএই প্রযুক্তি অনেক পুরোনোএতে ভয়েস এবং ডেটা সঞ্চালনের জন্য আলাদা নেটওয়ার্কের প্রয়োজন হয়এতে ভয়েস ট্রান্সমিশনের খরচ ডেটা ট্রান্সমিশন অপেক্ষা অনেক বেশিঅপরদিকে আইপিতে এই দুটো সেবাকে mgwš^Z করা হলে ন্যূনতম খরচে পৃথিবীর যে কোনো স্থানে ভয়েস কল করা যাবে সহজেইপ্রযু্‌ক্িতর উন্নয়নের সাথে সাথে আধুনিক প্রযুক্তিতে টেলিফোন সেবা দ্রুত বিস্তৃত ঘটতে যাচ্ছেএই প্রযুক্তি হচ্ছে প্যাকেট সুইচিং পদ্ধতিএটি একটি আধুনিক পদ্ধতিএতে ডেটা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে টেলিফোন সেবা প্রাপ্তির একটি প্রযুক্তিভিওআইপি এই প্রযুক্তিরই অংশএই প্রযুক্তিতে সুবিধা অনেক
 
ভিওআইপি কি
ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল সংক্ষেপে ভিওআইপি এক ধরনের প্রযুক্তি যা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ এর মাধ্যমে টেলিফোন কল করার সুবিধা প্রদান করেভিওআইপি ব্যবহার করে কিছু সার্ভিস রয়েছে যা অন্যপ্রান্তে একই সার্ভিস ব্যবহারের মাধ্যমে ফোন করার সুবিধা পাওয়া যায়অন্যদিকে যার একটি টেলিফোন bv¤^vi রয়েছে এমন যে কেউ লোকাল ছাড়াও দূরস্থানে, মোবাইল এবং অন্যদেশের (আন্তর্জাতিক) bv¤^v‡i ফোন করতে পারেনকম্পিউটার অথবা একটি বিশেষ ধরনের ভিওআইপি ফোন একটি অ্যাডাপ্টার ব্যবহার করে একই সার্ভিস পাওয়া সম্ভব। 
 
ভিওআইপিতে প্রচলিত সার্কিট সুইচড ভয়েস ট্রান্সমিশন লাইনের পরিবর্তে প্যাকেট সুইচড নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ভয়েস ডেটা ট্রান্সমিট হয়এই পদ্ধতিতে এনালগ অডিও সিগনাল গ্রহণ করে তা ডিজিটাল সিগনালে রূপান্তরিত করে যা ইন্টারনেট প্রটোকল (প্যাকেট) ব্যবহারে ট্রান্সমিট হয়
 
ভিওআইপি কিভাবে কাজ করে
প্রচলিত টেলিফোন ব্যবস্থা অপেক্ষা ভিওআইপি একটি আধুনিক মান সম্পন্ন ব্যবস্থাসাধারণভাবে আমাদের মাঝে প্রশ্ন জাগে, ভিওআইপি কিভাবে কাজ করেযখন আমরা হ্যান্ডসেট অথবা মাইক্রোফোনে কথা বলি তখন এটি ইলেকট্রিক্যাল সিগনালে রূপান্তরিত হয়এই সিগনাল হচ্ছে এনালগ সিগনালএর ভোল্টেজ লেভেল একটি রেঞ্জের মধ্যে যে কোনো ভেল্যু গ্রহণ করেএনালগ সিগনাল ডিভাইস দ্বারা একটি এলগরিদম কার্যকর করে তা একটি ডিজিটাল সিগনালে রূপান্তরিত করেএটা হতে পারে একটি একক ভিওআইপি ফোন অথবা একটি সফট্‌ফোন যা পিসিতে নির্বাহ হয়যদি এনালগ ফোন ব্যবহার করি সেক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় একটি টেলিফোনী অ্যাডাপ্টার (টিএ)
ডিজিটালাইজড ভয়েস প্যাকেটে সংগৃহীত হয় এবং তা আইপি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পাঠাতে হয়।  সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে টেলিফোন হতে ভিওআইপি ভয়েস সিগনাল ডিজিটাল সিগনালে রূপান্তরিত করেযদি একটি নিয়মিত ফোন bv¤^v‡i কল করা হয় তবে সিগনালটি অন্যপ্রান্তে রূপান্তরিত হয়ে যায়ভিওআইপি একটি কম্পিউটার হতে অথবা একটি বিশেষ ভিওআইপি কিংবা একটি ট্রাডিশনাল ফোন একটি অ্যাডাপ্টার ব্যবহার করে সরাসরি কল করার অনুমতি লাভ করে
 
 
কি ধরনের যন্ত্রপাতি দরকার
একটি দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজনএটি একটি ক্যাবল মডেল, ডিএসএল অথবা একটি লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কের মাধ্যমে হতে পারেকম্পিউটারের সঙ্গে একটি মাইক্রোফোন থাকবে যা ক্যাবল মডেমের মাধ্যমে ভয়েস পাঠাতে সক্ষম অথবা একটি ফোন সরাসরি টেলিফোন অ্যাডাপ্টার ব্যবহার করে ভয়েস পাঠাতে পারেসেই ভিওআইপি সার্ভিস প্রোভাডারের সহিত সংযোগ লাগবে।  
কেনো ভিওআইপি ব্যবহার করবো
উন্নত দেশ সমূহে ভিওআইপি প্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত ব্যাপকটেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় এটি যথেষ্ট পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছেভিওআইপি একটি সাশ্রয়ী প্রযুক্তিতাছাড়া এটি একটি আধুনিক প্রযুক্তি যার কার্যক্ষমতা অনেক ব্যাপকমূলতঃ দুটি প্রধান কারণে আমরা ভিওআইপি ব্যবহার করবোএক. কম খরচ এবং দুই. ফাংশনালিটি বৃদ্ধি বা কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি
সাধারণ ফোন অপেক্ষা ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল অর্থাৎ ভিওআইপি অনেক সাশ্রয়ীএটি পাবলিক সুইচড টেলিফোন নেটওয়ার্ক অর্থাৎ পিএসটিএন সার্ভিসের সমতুল্যভিওআইপির ফাংশনালিটি ব্যাপককল সেন্টার একটি ভাল ইন্টারনেট সংযোগের সহায়তায় যে কোনো অবস্থান হতে ভিওআইপি ফোন সহজে ব্যবহার করতে পারে
এক কথায়, ভিওআইপি প্রযুক্তিতে যথেষ্ট সুবিধা রয়েছেআমাদের দেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কিত অনেক ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ থাকা (এখানে মানব সম্পদ কাজে লাগানো যায় অত্যন্ত অল্প খরচে) সত্ত্বেও একমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যয়বহুল হওয়ায় সে সুযোগ কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে নাআমরা যদি পার্শ্ববর্তী দেশের সহিত কম খরচে যোগাযোগ করতে সক্ষম হই তাহলে অনেক আউটসোর্সিংয়ের কাজ করতে পারবো আমাদের দেশে অবস্থান করেইবিশেষ করে ছোট পরিসরের আউটসোর্সিংয়ের কাজ করা যাবেভিওআইপি প্রযুক্তির ফলে এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা লাঘব করা যাবে অনায়াসে।    
 
সফট্‌ওয়্যারে ভিওআইপি প্রযুক্তির ব্যবহার
 
বিভিন্নভাবে ভিওআইপি প্রযুক্তির ব্যবহার হয়ে থাকেএ ক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের সফট্‌ওয়্যার ব্যবহার উল্লেখ করা যেতে পারেআর এটি বিভিন্ন মাধ্যমে হতে পারে যেমন পিসি, ল্যাপটপ, মোবাইলবিভিন্ন ধরনের ম্যাসেঞ্জার সফট্‌ওয়্যার ইয়াহু, স্কাইপে, গুগলটক ইত্যাদি রয়েছেএই সফট্‌ওয়্যারসমূহ ফ্রি ডাউনলোড করা যায়এতে ব্যবহারকারীর বিনামূল্যে সার্ভিস পাবার সুবিধা রয়েছেতবে সেক্ষেত্রে প্রথমে নির্দিষ্ট সফট্‌ওয়্যারটি ইনস্টল করার পর অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়এদের যে কোনো একটি ম্যাসেঞ্জার সফট্‌ওয়্যার ব্যবহার করে দেশে-বিদেশে যে কথা বলা যায় তা মূলতঃ ভিওআইপি প্রযুক্তিরই অংশএক্ষেত্রে কম্পিউটার বা ল্যাপটপ থাকাটা বাধ্যতামূলকএরপরে ইন্টারনেটের সহায়তায় একপ্রান্তের ব্যবহারকারী উক্ত সফট্‌ওয়্যার ব্যবহার করেন এবং অপরপ্রান্তের ব্যবহারকারীকেও একই ধরনের সফট্‌ওয়্যার ব্যবহার করার মাধ্যমে বিনা খরচে কথা বলতে সক্ষম হনএই পদ্ধতিটি কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের জন্য বেশ সহজবোধ্যএক্ষেত্রে ব্যবহারকারী কম্পিউটারের সহিত সংযুক্ত মাইক্রোফোন কিংবা হেডফোন ব্যবহার করেন অপরপ্রান্তের ব্যবহারকারীর সঙ্গে কথা বলতেএতে অতিরিক্ত সুবিধা হচ্ছে, এতে কথা বলা ছাড়াও ওয়েবক্যাম-এর মাধ্যমে একে অপরকে দেখা যায়অর্থাৎ সামনা সামনি কথা বলার মতো উভয় ব্যবহারকারী পরস্পরের মুখোমুখী রয়েছেন এমনটা ঘটছেএ ধরনের ব্যবস্থা কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়এতে ম্যাসেজ বা তথ্য আদান-প্রদান ছাড়াও কথা বলা যাবে, ভিডিও কল এবং এক সঙ্গে একাধিক ব্যবহারকারী একইসঙ্গে কথা বলা সহ ভিডিও কনফারেন্স করতে পারবেনএই সফট্‌ওয়্যার ব্যবহার করে দূরপ্রান্তে যে কোনো ল্যান্ডফোন ও মোবাইলে কথা বলা সম্ভব হবে নির্দিষ্ট চার্জের মাধ্যমে
 
ফোনে ভিওআইপি প্রযুক্তির ব্যবহার    
আমাদের দেশে মোবাইল ফোনে আন্তর্জাতিক কল রিসিভ বা গ্রহণ করার জন্য যে ভিওআইপি প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয় তার সঙ্গে আমরা বেশি পরিচিতএকটি মোবাইল bv¤^v‡i বিদেশ থেকে কল আসার সময় লক্ষ্য করা যায়, একটি দেশি মোবাইল bv¤^vi থেকে কিংবা টিএন্ডটি ফোন থেকে কল এসেছে বা কলার আইডির পরিবর্তে প্রাইভেট bv¤^vi লিখা থাকে তখন বুঝতে হবে এটি ভিওআইপি প্রযুক্তির মাধ্যমে কল এসেছেতবে এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অবৈধমূলতঃ এভাবেই ভিওআইপি প্রযুক্তির সমপ্রসারণ ঘটেছেএখানে কল টারমিনেশন হচ্ছে অবৈধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেযদিও সরকার চাচ্ছে কল টারমিনেশনের ব্যবসাটা বিটিসিএল (বিটিটিবি) করুকএতে বরং সরকারের আয় হবেধরা যাক, কল টারমিনেশনের চার্জ প্রতি মিনিটে ২.৫০ থেকে ৩ সেন্টকিন্তু প্রকৃতপক্ষে খরচ হচ্ছে প্রতি মিনিট ১.৫০ থেকে ১.৭৫ সেন্টফলে এ খাতে সরকারের আয় হবে প্রতি মিনিটে ১ থেকে ১.২৫ সেন্ট।  
 
যেভাবে দেশে ভিওআইপির অবৈধ বিস্তার ঘটে
সূত্র মোতাবেক, ১৯৯৬ সালে ভিওআইপি প্রযুক্তির ব্যবহার বিস্তার লাভ করতে থাকেবিটিসিএল ও বিটিআরসির সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালের দিকে ভিওআইপি ছড়িয়ে যেতে থাকেযদিও আরেকটি সূত্র অনুযায়, ১৯৯৮ সালের আইএসপি প্রতিষ্ঠানসমূহ ভিওআইপি সার্ভিস শুরু করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এবং তারপর থেকে অবৈধভাবে কল টারমিনেশন শুরু হয়মোটকথা,  সরকারীভাবে ¯^xK…wZ না থাকায় অবৈধভাবে ভিওআইপি প্রক্রিয়া চালু হয়এই প্রক্রিয়ার এর সঙ্গে জড়িত ছিল বিটিসিএল, মোবাইল অপারেটর, পিএসটিএন ও আইএসপি অপারেটরবিদেশী চক্রের সহায়তায় এসব প্রতিষ্ঠান ভিওআইপি ব্যবসা চালাতে থাকে।  বলা হয়, অবৈধ ভিওআইপিকিন্তু প্রযুক্তি কখনো অবৈধ হতে পারে নাবলা বাহুল্য, ভিওআইপি উন্মুক্ত না থাকায় অবৈধভাবে এর তৎপরতা চলতে থাকে১৯৯৯ সালের দিকে এ তৎপরতা আরো ব্যাপকভাবে সমপ্রসারিত হয়গোপনভাবে কমার্শিয়াল ভবন ছাড়াও অনেকে বাসাবাড়ীতে বেশকিছু ল্যান্ডফোন লাইন (প্রায় ১৫-২০ টি ফোন লাইন)  নিয়ে ছোট আকারে ভি-স্যাট ও গেটওয়ে স্থাপনের মাধ্যমে অবৈধ টার্মিনেশন চালিয়ে যেতে থাকেআইএসপি ও মোবাইল অপারেটরের মাধ্যমে বৈদেশিক কলকে আন্তর্জাতিক টেলিফোন কোম্পানীর মাধ্যমে লোকাল কল হিসেবে গ্রাহকদের নিকট চলে আসতোআইএসপি ও মোবাইল অপারেটরকে দেয়া লাগতো এক থেকে দেড় সেন্ট এবং তারা লাভ করতো প্রায় ৬ সেন্টআর এ কারণেই তারা বিটিসিএলের সঙ্গে চুক্তি করেও তাদেরকে কোনো কল দিতো নাজানা গেছে, এটি সহজ ব্যবসা হওয়ায় প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের লোকজন এতে জড়িয়ে পড়েসহজ উপায়ে টাকা কামানোর একটি হাতিয়ার হিসেবে এই প্রযুক্তিকে ব্যবহার করেনএছাড়া এ প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মদদ জোগায় টিএন্ডটি'র একশ্রেণীর কর্মকর্তা ও কর্মচারীসরকারী এ প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা বরাবর রহস্যজনক ছিলআর এদের কারণে সরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ সঠিক কার্যক্রম থেকে বিচ্যূত হয়ে পড়েতবে ভিওআইপি উন্মুক্ত হলে এ ধরনের তৎপরতা অনেকাংশেই রোধ করা সম্ভব হবে
 
ভিওআইপি নিয়ে পরিসংখ্যানগত তথ্য
 
একটি পরিসংখ্যান মোতাবেক, ১৯৯৬ সালে প্রতিদিন গড়ে প্রতিদিন বৈধ পথে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে তিন লাখ ৭৮ হাজার মিনিট কল আসতোকিন্তু সেখানে ২০১০ সালে জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারী মাসে গড়ে প্রতিদিন বৈধ পথে তিন কোটি ১০ লাখ ৭২ হাজার মিনিট কল আসতে থাকেমূলত ২০০৮ সালের দিকে বিটিসিএল ছাড়াও আরো তিনটি ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ের লাইসেন্স দেয়ার ফলে বৈধ পথে কল বেশি আসতে থাকে২০০৮ সালের দিকে বিটিসিএল ও তিনটি ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে দিয়ে বৈধভাবে প্রতিদিন গড়ে এক কোটি ৯২ লাখ ১৯ হাজার ৮১৯ মিনিট কল আসেবিটিসিএল সূত্রের দাবি অবৈধ পথে রয়েছে ২০ শতাংশতবে টেলিকম অবকাঠামো অপারেটরদের সংগঠন টিওআইবির তথ্য মতে, এটি এখনো ৫০ শতাংশ রয়েছে১৯৯৬ সাল থেকে বিগত সময়ে অর্থাৎ দেড় দশকে অবৈধভাবে ভিওআইপি প্রক্রিয়ার ফলে সরকার প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেঅবৈধভাবে ভিওআইপি অভিযোগে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মোবাইল অপারেটর ও পিএসটিএন অপারেটরদের নিকট হতে প্রায় সাড়ে ৮ শ কোটি টাকা জরিমানা আদায় করেছে।   
 
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারী মাস নাগাদ গড়ে প্রতিদিন বৈধ পথে তিন কোটি ১০ লাখ ৭২ হাজার মিনিট কল আসছেভিওআইপি উন্মুক্ত করার মাধ্যমে বৈধ কল টারমিনেট এর সংখ্যা আরো কয়েকগুণ বাড়বে বলে ধারণা করা যাচ্ছেঅথচ ১৯৯৬ সালে বৈধ কলের সংখ্যা ছিল গড়ে প্রতিদিন তিন লাখ ৭৮ হাজার মিনিটঅবৈধ ভিওআইপি অপারেটরদের আন্তর্জাতিক কলের ক্ষেত্রে গড়ে চার্জ পড়ে ১.৭৫ সেন্ট প্রতি কলে, যেখানে বৈধ হলে আন্তর্জাতিক কলের ক্ষেত্রে এ চার্জ দাঁড়াবে ৩ সেন্ট প্রতি কলে
 
অবৈধভাবে বেড়ে ওঠা ভিওআইপি বন্ধে সামপ্রতিক তৎপরতা
সরকারীভাবে ভিওআইপি উন্মুক্ত না থাকায় অবৈধভাবে ভিওআইপি প্রযুক্তির প্রসার ঘটতে থাকেযথাযথভাবে এর বৈধতা থাকলে হয়তো এই প্রযুক্তি নিয়ে এই অবৈধ তৎপরতা তেমনভাবে লক্ষ্য করা যেতো নাতবে এর জন্য দায়ী কে? একটি কারণ হচ্ছে প্রযুক্তিকে উন্মুক্ত না করা এবং আরেকটি কারণ, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন সংক্ষেপে বিটিআরসি নামক প্রতিষ্ঠানের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্টতা থাকাতৃতীয়টি হচ্ছে বিদেশী চক্রের সহায়তাএই যে সামপ্রতিক সময়ে ল্যান্ডফোন প্রতিষ্ঠান ও আইএসপি প্রতিষ্ঠানসমূহে অভিযান চালানো এবং প্রতিষ্ঠানসমূহ হঠাৎ করে বন্ধ করে দেওয়া এটি কোনো ইতিবাচক কাজের মধ্যে পড়ে নাতাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়, বিটিআরসি তাদের দায়িত্ব কতটুকু পালন করছে? অভিজ্ঞ মহল থেকে একটি দাবী ওঠেছে তা হচ্ছে মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠান এ তৎপরতার সঙ্গে জড়িত থাকলেও এই রাঘব-বোয়ালরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেকেনইবা এমন বিমাতাসুলভ আচরণ, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছেকোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ না করে বরং অবৈধভাবে এর তৎপরতা যাতে চলতে না  পারে সে ব্যাপারে ইতিবাচক ভূমিকা নেয়া যুক্তিসঙ্গত নয় কি?
 
ভিওআইপিতে বিদেশী চক্র
বেশির ভাগ মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠানে বিদেশী বিনিয়োগ সর্বাধিকঅনেক ক্ষেত্রে এদের ভূমিকা আমাদের দেশের জন্য ûgwK¯^iƒc| এরা আসলে কি করছেএদের মধ্যে কেউ কেউ বিটিসিএল এর ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়েকে পাশ কাটিয়ে সরাসরি বিদেশ থেকে টেলিফোন কল বাংলাদেশের নেটওয়ার্কে ট্রান্সফার করছেএতে করে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেকিছু মোবাইল অপারেটর তাদের বিশেষ সিরিজের bv¤^vi ব্লক করার জন্য বিদেশী টেলিফোন অপারেটরকে নির্দেশনা পাঠায়অর্থাৎ বিদেশী অপারেটরকে ঐ বিশেষ সিরিজের bv¤^vimg~n বিটিসিএল এর মাধ্যমে পাঠানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেবিশেষ সিরিজের bv¤^vimg~n বিটিসিএল এ না পাঠিয়ে এর পরিবর্তে এই bv¤^vimg~‡n অবৈধভাবে ভিওআপির মাধ্যমে পাঠানোর ব্যবস্থা করে ঐ বিদেশী টেলিফোন অপারেটরের সহায়তায়এক্ষেত্রে যতটুকু জানা সম্ভব হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, কানাডা, স্পেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি দেশে একটি শক্তিশালী টেলি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছেএরাই বরাবর অবৈধভাবে ভিওআইপি ব্যবসায় প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দিয়ে আসছে।  কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন জাগে,  তাহলে আমাদের দেশের কর্তৃপক্ষ কি করছে? সরকারের উচিত এদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং প্রযু্‌ক্িতগত অগ্রসর হওয়া।   
 
অবৈধভাবে ভিওআইপি প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা
লক্ষ্য করা গেছে, যে কোনো প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অবৈধ পথে যথেষ্ট সীমাবদ্ধতা থেকে যায়ভিওআইপিতে এমন প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে এর মানের দিক দিয়ে ঘাটতি দেখা দেয়অনেক সময় দেশের বাইরে থেকে কল আসার সময় কথা ভেঙ্গে ভেঙ্গে আসেএ ব্যাপারে এ বিষয়ে অভিজ্ঞ একজন প্রযুক্তিকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যারা অবৈধভাবে ভিওআইপি ব্যবসা করছেন তাদের ইকুপমেন্ট বা যন্ত্রপাতি অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের হয়তাদেরকে অবৈধ পথে ভিওআইপি ইকুপমেন্ট সংগ্রহ করতে হয়এতে পণ্যের কোয়ালিটি বা মান যাচাই করার খুব বেশি সুযোগ থাকে নাতাছাড়া পদ্ধতিগত কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে মান সম্পন্ন কথা শোনার ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়ে যায়
 
বিশ্ব টেলিযোগাযোগ দিবসে ভিওআইপি উন্মুক্ত করার ঘোষণা
এটা ঠিক যে, দূরবর্তী স্থানে কথা বলার খরচ কমিয়ে আনতে ভিওআইপি নিঃসন্দেহে বড় ভূমিকা রাখবেবার বার ভিওআইপি উন্মুক্ত করার কথা শোনা যাচ্ছিলবিগত বছরগুলোতে এ নিয়ে অনেক কথা হয়েছেউল্লেখ্য, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৮ সালে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে ভিওআইপির লাইসেন্স দেয়প্রতিষ্ঠানসমূহ হচ্ছে নোভোটেল লিমিটেড, বাংলা ট্রাক কমিউনিকেশন লিমিটেড, মীর টেলিকম, এম অ্যান্ড এইচ টেলিকম এবং গ্যাটকো টেলি কমিউনিকেশন্স লিমিটেডসেসময় খুব সীমিতভাবে ভিওআইপি ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ দেয়া হয়ভিওআইপি নিয়ে কার্যকরী পদক্ষেপের অভাবে অবৈধভাবে ভিওআইপি ব্যবসা পরিচালিত হতে থাকেতবে এ ব্যাপারে আশা কথা শোনা যাচ্ছে
 
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশে পালিত হলো বিশ্ব টেলিযোগাযোগ দিবসসমপ্রতি এ দিবসে গত ১৬ মে, ২০১০ এ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজুউদ্দীন আহমদ রাজু জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সরকার ভিওআইপির জন্য নতুন আইন প্রণয়ন করছেআগামী জুনের মধ্যে আইনটি সংসদে পাস হবেআইন পাসের পরই সরকার নতুন করে ভিওআইপির সনদ দেবে দেরীতে হলেও সরকারের এ ঘোষণা আমাদের জন্য একটি শুভ বার্তা বয়ে এনেছেতিনি আরও উল্লেখ করেন, নতুন আইন হলে এর আওতায় নতুন নতুন প্রতিষ্ঠানকে সনদ দেয়া হবেআন্তর্জাতিক কলের চার্জও কমে আসবে
 
ভিওআইপিকে আইনগত অবকাঠামোর মধ্যে আনার জন্য ভিওআইপি উন্মুক্ত করা এখন চূড়ান্ত প্রায়ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী উল্লেখ করেন, এ সংক্রান্ত গাইডলাইন এখন চূড়ান্ত পর্যায়েভিওআইপির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশন উন্মুক্ত করা হবে জুন-জুলাইয়ের মধ্যেঅবশ্য, এই সম্মেলনে মন্ত্রী ¯^xKvi করলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় জটিলতার কারণে ভিওআইপি উন্মুক্ত করার প্রক্রিয়া wejw¤^Z হচ্ছে।  উক্ত সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবঃ) জিয়া আহমেদ, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানী লিমিটেডের (বিটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম খবিরুজ্জামান, টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ সাবমেরিন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেন প্রমুখ।   
 
কারা বৈধভাবে ভিওআইপি ব্যবসার প্রস্তুতি নিচ্ছে
অবৈধভাবে ভিওআইপি ব্যবসায় সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ায় এবং ভিওআইপি উন্মুক্ত করা সহ প্রায় তিন হাজার ভিওআইপি লাইসেন্স দেওয়ার ঘোষণায় অনেকেই বৈধভাবে ভিওআইপি ব্যবসার প্রস্তুতি নিচ্ছেএকটি সূত্র মোতাবেক, গ্রামীণফোন, বাংলা লিংক, রবি (একটেল), সিটিসেল, ওয়ারিদ প্রভৃতি মোবাইল অপারেটর ভিওআইপি ব্যবসার পরিচালনার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে যাচ্ছেতাছাড়া ল্যান্ডফোন অপারেটর প্রতিষ্ঠানসমূহ নামে অথবা বেনামে ভিওআইপি ব্যবসা চালাতে উদ্যোগ গ্রহণ করছেএদের মধ্যে বন্ধ করা ল্যান্ডফোন অপারেটর প্রতিষ্ঠানও রয়েছেএভাবে বৈধভাবে ভিওআইপি ব্যবসা চালু হলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করতে সক্ষম হবে
 
ভিওআইপি বাংলাদেশে, সম্ভাবনা কতটুকু
বাংলাদেশে ভিওআইপি একটি নতুন প্রযুক্তি বলা যায়যদিও কয়েক বছর হয়ে গেলো এদেশে ভিওআইপি প্রযুক্তির সমপ্রসারণ ঘটেছেআর তা অনেকটা অবৈধ তৎপরতায় বিসতৃত হয়েছেএবার ভিওআইপি আইনগতভাবে উন্মুক্ত হতে যাচ্ছেএর ফলে ভিওআইপি প্রযুক্তিগত সুবিধার মাধ্যমে সঠিকভাবে সামনের দ্বারপ্রান্তে এগিয়ে যাবেএ লক্ষ্যে যাবতীয় কাজ এগিয়ে চলেছেভিওআইপিতে বাংলাদেশে যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।  
 
ভিওআইপির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক কল নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকার তিন হাজার লাইসেন্স প্রদান করবেসমপ্রতি ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব সুনীল কান্তি বোস এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেনতিনি উল্লেখ করেন, টেলিযোগাযোগ খাতের কর কাঠামো সংস্কার করে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে চায় সরকারএক্ষেত্রে সিম ট্যাক্সসহ অন্যান্য কর হ্রাসের পদক্ষেপ নিবেসরকার আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে এ ব্যাপারে সকল ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবেজনাব সুনীল কান্তি বোস আরও জানান, প্রায় তিন হাজার ভিওআইপি অপারেটর তাদের ব্যবসা নির্বাহ করবে দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে
 
বৈধ ও অবৈধভাবে দেশে চার হাজার কোটি টাকার কল টারমিনেশন ব্যবসা হয়ে থাকেটেলিকমিউনিকেশন ইনফ্রাস্ট্রাকচার অপারেটর অব বাংলাদেশ এর (টিআইওবি) তথ্য মতে, আন্তর্জাতিক টেলিকম ব্যবসায়ের সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বাজার রয়েছেএই বাজারের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ অবৈধ ব্যবসায়ীর দখলেইতিমধ্যে দূরপাল্লার টেলিযোগাযোগ নীতিমালা ২০১০ চূড়ান্তভিওআইপি লাইসেন্স ইস্যু করবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)আর চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়আগামী তিন মাসের মধ্যে ভিওআইপি লাইসেন্স নিতে আগ্রহীদের জন্য বিজ্ঞাপন দেয়া হবেএরপরে বিটিআরসি আবেদন যাচাই-বাছাই করে তা মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করবেএর চূড়ান্ত অনুমোদন দিবে মন্ত্রণালয়দূর পাল্লার টেলিযোগাযোগ নীতিমালা অনুযায়ী ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) একাধিক হবে এবং ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) সংখ্যা তিনটি থেকে চাহিদা মাফিক বাড়িয়ে দেয়া হবেএটি নির্ধারিত হবে কল টারমিনেট এর সংখ্যা বিবেচনা সাপেক্ষে
 
 
 
ভিওআইপি কমিউনিকেশন বা যোগাযোগের একটি নতুন ফর্ম যা এনালগ অডিও সিগনাল গ্রহণ করার পর তা ডিজিটাল সিগনালে বা প্যাকেটে রূপান্তরিত করেএটি টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার একটি নতুন রূপসার্বিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় এই প্রযুক্তি যুগান্তকারী প্রভাব বয়ে নিয়ে আসবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।  
 
এমনটা আশা করা হচ্ছে, ভিওআইপি উন্মুক্ত করা হলে অবৈধ ভিওআইপি অপারেটররা একটা আইনি ফ্রেমওয়ার্কে চলে আসবেসংশোধিত পলিসি অনুযায়ী অবৈধ ভিওআইপি অপারেটররা আইনগতভাবে তাদের ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে একটা সুযোগ পাবেফলে তারা বৈধ এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে কল টারমিনেট করতে সক্ষম হবে
 
বিশ্বের প্রতিটি দেশে যেখানে প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় সেখানে প্রযুক্তিতে আমরা দারুণভাবে অবহেলিত এবং এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছিএতোদিন পরও আমাদের দেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে তেমন সাফল্য অর্জিত হয়নিএতোদিন ভিওআইপি উন্মুক্ত ছিল নাএর ফলে অবৈধভাবে ভিওআইপি সমপ্রসারিত হতে থাকেব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার পর অবশেষে ভিওআইপি উন্মুক্ত করার ঘোষণা একটি ইতিবাচক দিক হিসেবে চিহ্নিতসেই সঙ্গে বৈধভাবে ভিওআইপি প্রযুক্তি প্রসারে সকল দিক বিবেচনা করে একটি সঠিক নীতিমালা প্রণয়ন জরুরী হয়ে পড়েছেঅবশ্য, সরকারীভাবে বলা হচ্ছে নীতিমালা চূড়ান্ত পর্যায়েআইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভিওআইপিকে উন্মুক্ত করার ঘোষণা দেয়া হবে খুব শীঘ্রই
 
এই রিপোর্টটি লেখার শেষ পর্যায়ে আমরা বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি এবং কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, এখন পর্যন্ত তাদেরকে ভিওআইপি প্রযুক্তি নিয়ে কোনো নির্দেশনা, গাইড লাইন দেওয়া হয়নিএমনকি ভিওআইপি অপারেটিং লাইসেন্স ফি কত হবে সেটাও নির্ধারণ করা হয়নিএ সম্পর্কে আপডেট বা হালনাগাদ তথ্য জানার জন্য বিটিআরসির ওয়েবসাইটে খোঁজ রাখার পরামর্শ দিলেনতবে তাদের কথা অনুযায়ী বোঝা যাচ্ছে ভিওআইপির নীতিমালা ও অন্যান্য বিষয়ে তারা তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেনআমরা আশা করছি ভিওআইপি নীতিমালাতে তরুণ উদ্যোক্তদের বেশি সুযোগ দেওয়া হবে যা আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত সহায়ক হবেএ থেকে সরকার সরাসরি বা প্রত্যক্ষভাবে বেশি লাভবান না হলেও পরোক্ষভাবে অনেক সুযোগ সৃষ্টি হবেএমনটাই চাচ্ছেন আমাদের দেশের প্রযুক্তিবিদগণ

  চীন ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক

এশিয়া মহাদেশের তিনটি দেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে বিরাট অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। দেশ তিনটি হচ্ছেথ চীন, জাপান এবং ভারত। এ তিনটি দেশের রয়েছে দীর্ঘদিনের ইতিহাস, দর্শন, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি।
এক অর্থে বলা যায়, আজকের পৃথিবীর মূল অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি আমাদের এই মহাদেশে অবস্থিত। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ভিতর দিয়ে আসিয়ান দেশগুলো বিশেষ করে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং ইন্দোনেশিয়া এক আলোড়নকারী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। খুব শিগগিরই ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়াও এই ধারায় সম্পৃক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কয়েকটি বিশেষ দেশের দিকে তাকাবার আগে আমাদের এ যুগান্তকারী ক্ষেত্র সম্বন্ধেও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে হেরে যাওয়ার পরও জাপান অল্প সময়ের মধ্যে তার হারিয়ে যাওয়া অর্থনৈতিক শক্তি পুনরুদ্ধার করতে সমর্থ হয়। প্রমাণিত হয়, শিকড় যদি শক্ত হয় তবে প্রবল সঙ্কট অথবা অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সুনামির পরও অল্প সময়ের ভিতরেই আবারো মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো সঃম্ভব হয়। এ প্রসঙ্গে জার্মানির উদাহরণও আমরা টেনে আনতে পারি।
অনস্বীকার্যভাবে চীন আমাদের বিশ্বের শুধুমাত্র দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তিই নয়, একটি অত্যন্ত ক্ষমতাধর সামরিক শক্তি। ১৯৪৯ সালে লংমার্চের অবসানের পর মাও সেতুংয়ের উক্তি ‘কমঢটহ ডদধভট দট্রর্ ্রমমঢ লয’ কে সামনে রেখে ধূমকেতুর গতিতে চীন অগ্রগতি সাধন করে। ১৯৪৭-এ ভারত স্বাধীনতা অর্জন করার পরও উন্নয়নের গতি অত্যন্ত মন্থর ছিল। একটি বৈপ্লবিক সরকারের যে সুবিধা এবং গতি সেটা গণতান্ত্রিক কাঠামোয় অনুপস্থিত থাকে। কোন পথ অনুকরণীয় সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। আশির দশক থেকে ভারত খোলাবাজার অর্থনীতির পথ বেছে নেয় এবং ফলশ্র“তিতে উন্নয়নের গতি লক্ষণীয়ভাবে বেড়ে যায়। ভারত এবং চীন দু’টি বিশাল দেশ। এই মুহূর্তে চীন ও ভারত একে অপরের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক সহযোগী।
আজকের পৃথিবীতে কোনো দেশের পক্ষে একলা চলো নীতি গ্রহণ করা সম্ভব নয়। আপাতদৃষ্টিতে দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং চীনের মধ্যে বিরোধ এবং দৃষ্টিভঙ্গির অনেক পার্থক্য বিরাজমান। ১৯৬২ সালে চীন-ভারত যুদ্ধ দু’দেশেরই স্মৃতি থেকে মুছে যায়নি। দু’টি দেশের অর্থনৈতিক শক্তিই শুধু বিশাল নয়, সামরিক দিক থেকেও তারা পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। দৃশ্যমান প্রতিযোগিতা সত্ত্বেও দু’টি দেশই অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অত্যন্ত বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিরোধ থাকা সত্ত্বেও এই দুই দেশ তাদের নিজেদের স্বার্থেই বৈরিতাকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে দিতে রাজি নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও তারা গড়ে তুলেছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। অদূর ভবিষ্যতে কি হবে সেটা নিয়ে অনুমান করা দুরূহ ব্যাপার। কিন্তু দুই দেশই নিজেদের বিকাশের ক্ষেত্রে তাদের স্বকীয় অবস্থান সমুন্নত রেখে সম্পর্কের স্থিতিশীলতা বজায় রাখবে বলে আমি আশা রাখি। এর মূল কারণ হচ্ছে বাণিজ্য এবং অর্থনীতি।
চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের গভীর বন্ধুত্বের সূত্রপাত হয় প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর আমলে। ১৯৫৭ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চীন সফর করেন এবং চতুর্থ ন্যাশনাল কংগ্রেসে ভাষণ দেন। এ সময় চেয়ারম্যান মাওয়ের সঙ্গেও তার সাক্ষাৎ হয়। এছাড়া স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারে সৃজনশীল পদক্ষেপ নেন। তিনি বিখ্যাত ফরাসী চিন্তাবিদ আন্দ্রে ম্যালরক্স এবং মিসরের খ্যাতনামা সাংবাদিক হাসান হেইকেলকে চীন এবং বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ করেন। এছাড়াও পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত কেএম কায়সারকে বঙ্গবন্ধু মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত করেন ওই দেশের মাধ্যমে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য। এক অর্থে বলা যায়, চীনের সঙ্গে সম্পর্কের মূল দিকনির্দেশনা বঙ্গবন্ধুর সময়ই নির্ধারিত হয়। বিরোধী দলের নেতা হিসেবে ১৯৯৩ সালে শেখ হাসিনা এক ঐতিহাসিক সফরে চীন যান। নিজ দলের একাংশের বিরূপ ভাবনাকে অগ্রাহ্য করে তিনি এ সফরের উদ্যোগ নেন। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পলিট ব্যুরোর একজন সদস্য গ্রেট হলে শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানান। পলিট ব্যুরোর সেই সদস্য বর্তমানে চীনের রাষ্ট্রপতি হু জিনতাউ। সেই সফরে শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী ছিলেন মরহুম আব্দুস সামাদ আজাদ, মরহুম শাহ এমএস কিবরিয়া, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং আরো অনেকে।
১৯৯৬-এ ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে মক্কা শরীফে উমরাহ্ এবং পরে মদিনা মনোয়ারা জিয়ারত করেন। কিন্তু তার প্রথম সফর হয় চীনে। এছাড়াও আমরা জানি তার অনুরোধে অত্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যে চীন ঢাকায় একটি কনভেনশন সেন্টার নির্মাণ করে। বর্তমানে তা বঙ্গবন্ধু কনভেনশন সেন্টার হিসেবে পরিচিত। এসব তৎপরতা সত্ত্বেও ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ক্ষমতায় আসার পর মাত্র ৬ মাসের মধ্যে ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী ওই সময় ঢাকা সফরে আসেন। পাকিস্তান ও ভারত পারমাণবিক শক্তি পরীক্ষা করার পর শেখ হাসিনাই একমাত্র সরকারপ্রধান যিনি এই দুই দেশ সফর করেন এবং এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার আহ্বান জানান। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন তাকে বিশেষভাবে অভিনন্দন জানান।
আমরা আমাদের অতীতকে কোনোদিনই ভুলতে পারি না। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের বিরাট অবদান এবং সহায়তা প্রতিটি দেশপ্রেমিক বাঙালির কাছে স্মরণীয়। একই সঙ্গে বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি চীনের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখা একটি দায়িত্বশীল সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। দু’দেশের দ্বিপক্ষীয় বেড়াজালে আটকে না যেয়ে আমরা খুব সাবলীলভাবে আমাদের বন্ধুত্ব স্থাপন করতে পেরেছি। এটা একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য। ১৯৯০ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের পররাষ্টনীতি একই ধারায় এগিয়ে গেছে। এ নিয়ে ভারতের কিছু রক্ষণশীলতা যদি থেকেও থাকে সেটা অলংঘনীয় নয়। আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের ভিতর দিয়ে দুই বৃহৎ প্রতিবেশীকেই আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি যে, আমাদের অবস্থান কোনোভাবেই মেরুকরণের ভিতর আটকে যাবে না। আমি মনে করি এটা সক্রিয় পররাষ্ট্র নীতির একটা বলিষ্ঠ প্রতিচ্ছবি।
বহুক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে ভারতের বিরোধ সেটা সীমানা নিয়েই হোক অথবা কৌশলগত চিন্তা-ভাবনার কারণেই হোক থাকলেও সবকিছুকে ছাপিয়ে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সম্পর্ক জোরদার হয়েছে। আশা করা যায়, বৈরিতাকে আয়ত্তে রাখার ক্ষেত্রে তা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। খবরের কাগজ খুললেই আমরা দেখতে পাই যে, মাঝে মাঝে পুরনো বিরোধ এবং বর্তমান চিন্তা-ভাবনার পার্থক্য যেমন দৃষ্টিতে আসে তেমনি দু’দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রেও নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, চীনের প্রায় প্রতিটি শহরেই ভারত কনস্যুলেট বা বাণিজ্য মিশন প্রতিষ্ঠা করেছে যেটা কয়েক বছর আগেও চিন্তা করা যেত না। অর্থাৎ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের শিকড়টাকে গভীর থেকে গভীরতর করার প্রয়াস চলছে। একই সঙ্গে যে ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ফারাক সেটা কমিয়ে আনতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দুই দেশ পদক্ষেপ নিচ্ছে। স্নায়ু যুদ্ধের সময় দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে আমরা যেমন একটা ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান দেখতে পেয়েছি সেটা ভারত এবং চীনের মধ্যেও উপস্থিত। তীক্ষ্নভাবে এটাও সত্য যে, এই দুই বিরাট প্রতিবেশী সম্পর্ণ সচেতন যে, ভারসাম্যকে বিনষ্ট করা তাদের মূল গন্তব্য অর্থাৎ অর্থনৈতিক উন্নতির ব্যাপারে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করতে পারে।
মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের রয়েছে দীর্ঘদিনের ঐতিহাসিক সম্পর্ক এবং সে দেশের নানা উন্নয়ন প্রক্রিয়ায়ও চীনের বিরাট অবদান রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই আমরা আশা করতে পারি, মায়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়ন এবং দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রয়াসে চীনের সমর্থন পাওয়া যাবে। সমুদ্রসীমার বিরোধ নিত্তিতে দু’দেশ যে পথে চলছে তা সুস্থতারই লক্ষণ।
মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের এক সময় বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ভারত তার নীতি সম্পর্ণ পাল্টে এখন সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছে এবং সড়কসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে মিয়ানমারকে সহযোগিতা প্রদান করছে। এ বাস্তবতাকে সামনে রেখে সমুদ্রসীমার বিরোধ নিত্তিতে যেমন জাতিসংঘের সালিসীর জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে তেমনি দ্বিপক্ষীয় আলোচনার দ্বারও খোলা রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কোনো কিছু দেখা সমীচীন হবে না এবং এ বিষয়ে দেশের ভিতরও ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে।